মোঃ সাইফুদ্দীন
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার প্রায় ১৫০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত পল্লী বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার ভার কাঁধে নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর শাহরাস্তি জোনাল অফিস। প্রায় ৮৫ হাজার গ্রাহকের জন্য ১৯ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ সরবরাহে দায়িত্ব পালন করছে মাত্র ৮৫ জন কর্মী। যেখানে প্রয়োজন অন্তত ১০০-১১০ জন দক্ষ জনবল। জনবল ঘাটতির এই বাস্তবতায় ক্রমান্বয়ে মুখ থুবড়ে পড়ছে সেবাদান কার্যক্রম, আর দুর্ভোগ বাড়ছে সাধারণ গ্রাহকদের।
অফিস সূত্রে জানা যায়, সদস্য সেবা বিভাগে ৪ জনের স্থলে আছেন মাত্র ১ জন। ৩০ জন লাইনম্যানের স্থলে কাজ করছেন ২২ জন, ২ জনের জায়গায় মিটার টেস্টিং ম্যান আছেন মাত্র ১ জন। এমনকি নিরাপত্তা প্রহরী ও মালী পদেও রয়েছে ঘাটতি। এককথায়—প্রায় প্রতিটি বিভাগেই কাজ চলছে ‘অসামঞ্জস্যতা’ ও ‘অধূরা সক্ষমতা’ নিয়ে।
সেবা ঘাটতির সবচেয়ে বড় প্রমাণ মেলে অভিযোগ ব্যবস্থাপনাতেই। নির্দিষ্ট কোনো অপারেটর না থাকায় লাইন বা মিটার সংক্রান্ত সমস্যার জন্য ফোন করলে অনেক সময় সাড়া দেন মাঠপর্যায়ের লাইনম্যানরাই। এতে করে অভিযোগের যথাযথ লিপিবদ্ধকরণ ও দ্রুত সমাধানের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। অনেক সময় অভিযোগের সাড়া না পেয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অফিসে ছুটতে হয়।
এই সংকট নিয়ে কথা বলতে চাইলে শাহরাস্তির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মুহাম্মদ নিজামউদ্দিন শামস সাংবাদিকদের কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অথচ এলাকাবাসী মনে করেন, তারই অধীনে পরিচালিত এই সেবাকেন্দ্রের বর্তমান অবস্থার দায় এড়ানো সম্ভব নয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় বেশ কিছু পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হলেও শাহরাস্তি জোনাল অফিসে সেই নিয়োগের সুষম বণ্টন হয়নি। ফলে একদিকে কিছু কর্মী অলস পড়ে থাকছেন অন্যত্র, অন্যদিকে এই গুরুত্বপূর্ণ জোনে অব্যাহত রয়েছে কর্মী সংকট।
বিদ্যুৎ সেবার ব্যর্থতা শুধুই একটি প্রতিষ্ঠানিক সমস্যা নয়; এটি স্থানীয় অর্থনীতি, জীবনযাত্রা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। শিল্পায়নের গতি থেমে যাচ্ছে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত, আর ভোক্তারা হারাচ্ছেন আস্থা।
শাহরাস্তির সচেতন মহল মনে করে, “যতই প্রযুক্তিনির্ভরতার কথা বলা হোক না কেন, মৌলিক সেবা নিশ্চিতে দক্ষ জনবল ছাড়া সম্ভব নয়। আজকে শাহরাস্তির বিদ্যুৎ সমস্যা শুধু প্রশাসনিক দুর্বলতা নয়—এটি এখন জনজীবনের স্থবিরতার অন্যতম কারণ।”
শাহরাস্তি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে জনবল সংকট একটি গভীর কাঠামোগত ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন এই অঞ্চলে মুখ থুবড়ে পড়বে। সঠিক পদায়ন ও পর্যাপ্ত নিয়োগই এখন সময়ের দাবি।