আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়কে এক শিফটে নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে প্রায় ৯০ ভাগ কাজই শেষ হয়েছে। আর শিক্ষকদের ক্লাস নেয়ার সময়ও বাড়ানো হবে।’
গত বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) প্রশাসনের বড় রদবদলের অংশ হিসেবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খানকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে বদলি করা হয়েছে। রবিবার (৩০ অক্টোবর) ছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তার শেষ কর্মদিবস।
সচিবালয়ে আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা রাতারাতি স্কুলভবনও নির্মাণ করতে পারছি না। যে কারণে ছাত্র ও শিক্ষক সংখ্যা সবকিছু বিবেচনা করে আমরা দেশের সব স্কুলকে এক শিফটে আনার পরিকল্পনা করেছি। সে ব্যাপারে কাজ প্রায় ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন, এতে কোনো স্কুলই বন্ধ হচ্ছে না। কোনো শিক্ষকই চাকরি হারাচ্ছেন না। সবই ঠিক থাকছে। কিন্তু আমরা কাজটিকে ভাগ করছি। যেখানে দুই কক্ষ আছে, সেখানে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক থাকছে। আবার যেখানে ভবন করার সুযোগ আছে, সেখানে ভবন করবো। সবমিলিয়ে আমরা আশা করছি, দেশের সব প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এক শিফটে নিয়ে আসব।
এক কক্ষের স্কুলগুলোকে দ্বিকক্ষের স্কুলের সঙ্গে সংযুক্তি করে ফেললে এক কক্ষের জায়গাগুলো কী হবে জানতে চাইলে এই সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা কোনো স্কুলের জায়গাই নষ্ট করছি না। সেখানে আমদের সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার (এটিও), মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন, এককক্ষের স্কুলগুলোকে তাদের অফিস করে দেয়া হবে।
তবে সব জায়গায় একই কৌশল ব্যবহার হবে না বলেও জানান তিনি।
সচিব বলেন, একেক জায়গার জন্য আমরা একেক ধরনের কর্মকৌশল নির্ধারণ করবো। যে কারণে বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে একটু সময় লাগছে। আমরা পর্যায়ক্রমে কাজটি করবো। কিন্তু কোথাও স্কুল সংখ্যা কম, এমনও গ্রাম আছে, যেখানে তিন কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র একটি স্কুল, তাতে দুটি কক্ষ আছে। সেখানে কক্ষ বাড়ানো ছাড়া কিছু করার সুযোগ নেই। যে কারণে আমরা বিভাগ অনুসারে, জেলা অনুসারে, উপজেলা অনুযায়ী, যেমন চরাঞ্চলে, হয়তো সেখানে ছাত্রসংখ্যা ৫০ জন, কিন্তু স্কুলটি রাখতে হচ্ছে। কারণ চরে পড়াবার আর কোনো ব্যবস্থা নেই। যে কারণে বিষয়গুলো ঘটনা অনুসারে পর্যালোচনা করছি এবং নির্ভুলভাবে করার চেষ্টা করছি। আগামী জানুয়ারি থেকেই আমরা এটি করতে পারবো। পুরোটা করতে না পারলেও অনেকটা শেষ করবো।
সেক্ষেত্রে ক্লাসের সময়টা কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকা কিংবা মহানগর এলাকার একটি সময় আছে। কিন্তু গ্রামের স্কুলগুলোতে একটু দেরি করে ক্লাস শুরু হয়। আবার স্কুলগুলো গ্রামে হলেও শিক্ষকরা শহরে থাকেন। যে কারণে যাতায়াতের ব্যাপারটিও আমরা বিবেচনায় রাখছি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য হলো, শিক্ষকরা ক্লাসে থাকছেন কি না, সেটির ওপর। কারণ আমরা চাই, শিক্ষকরা যাতে নিয়মিত পাঠদান করেন। আর টিচিং লার্নিং সময়টাও আমরা বাড়াতে চাই। যে কারণে আমরা এক শিফটে নিয়ে আসতে চাচ্ছি। তিন ঘণ্টার জায়গায় আমরা সাড়ে চার ঘণ্টা পাঁচ ঘণ্টা করতে চাই।
ঢাকার অনেক স্কুলে অনেক বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী আছে, সেখানে তাদের এক শিফটে নিয়ে আসলে বাচ্চাদের অন্য স্কুলে পাঠানো যাবে না। সেক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত কী জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের কোথাও কোথাও পরিস্থিতি অনুসারে ভাবতে হবে। এই সংকটটা মহানগরীগুলোতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রয়েছে। আবার আইডিয়াল স্কুলের পাশে সুন্দর অবকাঠামোসহ স্কুল আছে, সেখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে না, এতে সেখানে শিক্ষার মান বাড়ছে না। অথচ সেখানে দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষকরা আছেন। শিক্ষার্থীরা গেলে তো স্কুলটা কার্যকর হবে। যে কারণে আমরা চাই, আমাদের দেশের সব স্কুল সমমান সম্পন্ন হোক।