মেহেদী হাসান, জাবি প্রতিনিধি: ঈদুল ফিতর ও অন্যান্য উৎসব উপলক্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গত ৩১ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে ক্লাশ ছুটি। ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীরা এ ছুটিতে বাসা চলে যাওয়ায় ক্যাম্পাস এখন ফাঁকা। তবে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আপত্তি থাকায় ছুটিতেই নির্মাণ কাজ শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ। যদিও এর আগে প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ময়েজ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেছেন ‘ঈদের ছুটিতে কাজ শুরু করা হবে না।’ এদিকে ছুটিতে কাজ শুরু করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হলের সম্প্রসারিত ভবনের পাশে একর জায়গা ঘিরে নেওয়ার কাজ চলছে। কতটুকু জায়গা ঘেরা হবে সে বিষয়ে চলছে মাপ-জোখ।
এছাড়াও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদ, জীববিজ্ঞান অনুষদ এবং কলা ও মানবিকী অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে। এদের মধ্যে প্রথম দুটির কাজ মাস খানেক শুরু হলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে থেমে স্থগিত ছিল।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগকে অনুষদে রূপান্তরিত করতে চান বিভাগীয় শিক্ষকরা। এ লক্ষ্যে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে অনুষদ ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যার জন্য আল বেরুণী হলের বর্ধিতাংশের স্থানটি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভবন নির্মাণের জন্য ৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার ৪৭ কোটি ৮৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা বাংলাদেশ সরকার ও বাকী ৫০ কোটি টাকা ভারত সরকার অর্থায়ন করবে।
নির্ধারিত জায়গাটি লেকের পাড়ে হওয়ায় এতে ছয়তলাবিশিষ্ট বহুতল এ ভবনের সুয়ারেজ সহ অন্যান্য আবর্জনায় লেক দূষিত ও ভরাট হবে। আরেকদিকে কাটা পড়বে দুই শতাধিক গাছ। এছাড়া পাখির স্বর্গ হিসেবে পরিচিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্লাইং জোন হিসেবে বহুতল ভবন নির্মাণ হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়বে পরিযায়ী পাখির চলাচলের পথ। এছাড়াও দুই পর্বে নির্মাণ পরিকল্পনায় থাকা এ ভবনের পূর্ণাঙ্গ কাজ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হওয়া দুটি অনুষদ ও ১টি ইন্সটিটিউটের ভবন নির্মাণের জায়গা নিয়ে তৈরী হবে বড় সংকট।
সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচার থিয়েটার তৈরী হয়েছে শিক্ষার্থীদের ক্লাশ নেওয়ার জন্য। কলা ও মানবিকী অনুষদের দুটি ভবন আছে। এরপর নতুন করে সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণ কাজ হচ্ছে। তারপরও একটি বিভাগের জন্য এতবড় ভবন নির্মাণ যৌক্তিক নয়।
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক লুৎফল এলাহী বলেন, ’কোন ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই ভবন নির্মাণ অদুর ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। সাম্প্রতিককালেই তিনটা হলের মধ্যে সংঘর্ষ হলো, এগুলো পরিকল্পনা ছাড়াই ভবন নির্মাণের কুফল। চারুকলা বিভাগের ভবনের প্রয়োজন হলো ভবন নির্মাণ হোক কিন্তু সেটা পরিকল্পনা অনুযায়ী হোক এটাই আমরা চাই।’
তবে ক্যাম্পাস খোলা থাকলে পরিকল্পনা ছাড়াই গাছ কাটার সিদ্ধান্তকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিরোধিতা করবে বলে ঈদের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে লুকোচুরি করে গাছ কাটার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।
এদিকে ছাত্র-শিক্ষক ও মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নকারী কমিটির মতামতের উপর ভিত্তি করে ঈদের বন্ধে কাজ শুরু হবে না বলে পূর্বে জানালেও প্রকল্প পরিচালক ও চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক এম এম ময়েজউদ্দীন এ বিষয়ে বলেন, আপাতত ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেই।আমরা নকশা অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ করছি, গাছগুলো দেখছি। সাইট ঘেরাও কার্যক্রম চলছে।
এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, ’আমাদের দাবি ছিলো মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে ভবন নির্মান করো। কিন্তু তারা এই শপিং লিস্টের টাকার লোভ থেকে নিজেদের সরাতে পারছেন না। তারা শুধু আমাদের ভয় দেখাচ্ছেন কাজ শুরু না হলে টাকা চলে যাবে। আদতে তারা জুজুর ভয় দেখিয়ে কাজগুলো শেষ করতে চাচ্ছে। মাস্টারপ্ল্যান ছাড়াই তাদের এই তাড়াহুড়ো সামনের দিনে আমাদেরকে বড় আন্দোলনের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে।’
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ’চারুকলা বিভাগ অনুষদে রুপান্তরিত হবে। এখন তাদের নিজস্ব কোন জায়গা নেই, তাদের সু্যোগ সুবিধা দিতে হবে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করেই এই ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।’