মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫

জাহিদুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুই তরুণী ও আট আসামির সন্ধানে নেমেছে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
-বিজ্ঞাপণ-spot_img

রাজধানীর বনানীতে তুচ্ছ ইস্যুকে কেন্দ্র করে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে এজাহারে নাম থাকা আট আসামিকে এখনও খুঁজে পায়নি পুলিশ। এছাড়াও যে দুই তরুণীকে কেন্দ্র করে এই ঘটনার সূত্রপাত তাদেরও খোঁজ মেলেনি।

পুলিশের ভাষ্য, বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আর তরুণীদের ব্যাপারে তথ্য পেয়েছেন তারা। কিন্তু তাদের প্রকৃত অবস্থান শনাক্ত না হওয়ায় গ্রেফতার করা যাচ্ছে না।

গত রোববার বিকেলে বেসরকারি প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের দুই পক্ষের ‘মারামারিতে’ ছুরিকাঘাতে খুন হন শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম। পরে তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাতেই সেই ঘটনায় বাদী হয়ে তার ফুপাতো ভাই আটজনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

থানা পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই মামলার প্রথম তিনজন আসামিই ঘটনার প্রকৃত হোতা। তাদের ধরা গেলেই বাকিদের তথ্য মিলবে। ফলে তাদের গ্রামের বাড়িতেও অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু এখনো তাদের হদিস মিলছে না। আসামিদের আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদের বাড়িতেও নজর রাখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আসামি তাদের ব্যবহৃত ফোনগুলো বন্ধ রাখায় খুঁজে পেতে বেগ পেতে হচ্ছে।

থানা পুলিশ জানায়, তারা ঘটনার পর সেই এলাকার একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। তবে মূল ফুটেজটি একটি বাড়িওয়ালার কাছ থেকে তারা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। সেই বাড়িওয়ালা ঢাকার বাইরে আছেন। এর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও তারা সংগ্রহ করে সেই মোতাবেক জড়িতদের শনাক্তে মাঠে কাজ করছেন।

জাহিদুল খুনের ঘটনায় সোমবার ভোরে খুলনার তেরখাদা বিল দুরিয়া গ্রামের মাহবুবুর রহমানের ছেলে আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার দক্ষিণ জাহাঙ্গীরপুর (বালুর পুকুরপাড়া) গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) ও জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী যোগাদহ গ্রামের সুলাইমান শেখের ছেলে আল আমিন সানিকে (১৯) গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তারা কেউই এজাহারভুক্ত আসামি নন। তাহলে তাদের কেন গ্রেফতার করা হলো তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এ ব্যাপারে থানার ওসি রাসেল সরোয়ার বলছেন, তারা জড়িত বলেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। নানা তথ্য মিলছে। তদন্তের স্বার্থে সেগুলো আপাতত আমরা প্রকাশ করছি না।

তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃতরা ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। সিসিটিভি ফুটেজেও তাদের উপস্থিতি দৃশ্যমান হয়। তারা মামলার এজাহারভু্ক্ত আসামি।

শনিবার রাতে দায়েরকৃত মামলার এজাহারে যে আটজনের নাম উল্লেখ করা হয় তারা হলেন- মেহেরাজ ইসলাম (২০), আবু জহর গিফফারি ওরফে পিয়াস (২০), মাহাথির হাসান (২০), সোবহান নিয়াজ তুষার (২৪), হৃদয় মিয়াজি (২৩), রিফাত (২১), আলী (২১) ও ফাহিম (২২)।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আট আসামির মধ্যে মেহেরাজ ইসলাম, আবু জহর গিফফারি ওরফে পিয়াস ও মাহাথির হাসান হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে নানা ভূমিকায় ছিলেন। তারা সবাই বনানী এলাকায় থাকেন।

এদিকে, বনানী থানার ওসি রাসেল সরোয়ার বলেছেন, যেই দুই তরুণীকে কেন্দ্র করে ওই খুনের ঘটনা ঘটে তাদের ব্যাপারে তথ্য পেয়েছেন। তাদেরকে শনাক্তও করা গেছে। কিন্তু এখনো গ্রেফতার করা যায়নি। বাকিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। দুই তরুণী ফোন বন্ধ করে রাখায় তাদের অবস্থান তারা বের করা যাচ্ছে না। তারা কোনো আত্মীয় স্বজনের বাসায় লুকিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, ঘটনায় জড়িতরা সবাই বনানী বিদ্যা নিকেতনের ছাত্র। কলেজেও একইসঙ্গে পড়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় একই হলেও পড়াশোনার বিষয় তাদের ভিন্ন।

ঘটনা তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, আসামিরা পরস্পর বন্ধু। তাদের তিনজনের মধ্যে দুইজনের প্রেমিকা নিয়ে তারা ক্যাম্পাসে এসেছিলেন সেদিন। দুপুরে ক্যাম্পাসের বাইরে একটি সিঙ্গারার দোকানে সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন জাহিদুল ও তার আরও কয়েকজন বন্ধু। সেই সময় তারা হাসাহাসি করেন। এই দৃশ্য দেখে তাদের কাছে আসেন মাহথির ও পিয়াস। তারা কেন হাসাহাসি করছিল তা জানতে চান। জাহিদুল বলেন এমনি। কিন্তু তারা তা মানেননি। উল্টো তারা জাহিদুলের সঙ্গে তর্কে জড়ান। যা ওই সময় আশপাশের থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখেছেন। তারা পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই সময় জাহিদুলের কোনো প্রকার দোষ ছিল না। তারা কয়েকজন বন্ধু কোন একটা বিষয়ে হাসছিল। কিন্তু বিষয়টি ভালোভাবে নেননি পিয়াস ও মাহাথির। তারাই তর্কে জড়িয়ে বিষয়টিকে ঘোলাটে করেন।

উল্লেখ্য, শনিবার বিকেলে মিডটার্ম পরীক্ষা শেষে নিহত জাহিদুল প্রাইম এশিয়ার গলিতে চা সিঙ্গারা খাওয়ার জন্য গিয়েছিল। ওই সময় সেখানে তিন মেয়েও ছিল। সেই মেয়েদের ইভটিজিং করা হয়েছে বলে দাবি করে তারা তাদের বন্ধুদের ফোন করে। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন উভয়পক্ষকে নিয়ে মীমাংসাও করে দেয়। কিন্তু এই ঘটনার প্রধান তিনজন মাহাথির, মেহেরাব ও আবুজর গিফারী বিষয়টি অন্যদিকে মোড় ঘোরান।

তারা হাজারীপাড়া এলাকার ছেলেদের নিয়ে আসেন এবং জাহিদুলের ওপর হামলা চালান। এসময় জাহিদুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটে দৌড়ে আসার সময় আঘাতপ্রাপ্ত হন। তারা তাকে ধারালো অস্ত্র আঘাত করে তারা পালিয়ে যায়।

শেয়ার করুন

সর্বশেষ নিউজ

ঢাকা কলেজের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সিটি কলেজ দুই দিন বন্ধ ঘোষণা

রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আগামী...

লালপুরে জমিতে ছিটানো কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় কৃষকের মৃত্যু

নাটোরের লালপুরে কীটনাশক স্প্রে করতে গিয়ে বিষক্রিয়ায় রাজন আলী (২৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়...

বেনজিরের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময়কার দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র‌্যাব প্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারি করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন...

চীনের অর্থায়নে হাসপাতাল ও ৬ লেন সড়ক ঝালকাঠিতে নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন

ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ৬ লেনের রাস্তা নির্মাণ ও চীন সরকারের অর্থায়নে ঝালকাঠির নলছিটিতে ১ টি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করার দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে...

সম্পর্কিত নিউজ

ঢাকা কলেজের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সিটি কলেজ দুই দিন বন্ধ ঘোষণা

রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায়...

লালপুরে জমিতে ছিটানো কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় কৃষকের মৃত্যু

নাটোরের লালপুরে কীটনাশক স্প্রে করতে গিয়ে বিষক্রিয়ায় রাজন আলী (২৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু...

বেনজিরের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময়কার দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র‌্যাব প্রধান বেনজীর...