জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী নানা কর্মসূচির অংশ হিসেবে নির্মাণাধীন টিচার স্টুডেন্ট সেন্টার (টিএসসি) ভবনের দেয়ালে একটি গ্রাফিতি অংকন করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্রাফিতি থেকে ২০২৫ সালের জুলাই মাসে মাইলস্টোন স্কুলের বিমান দুর্ঘটনা ও মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যার অংশ মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে।
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন, এই দুটি ঘটনাই অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরে বলেই বিশ্ববিদ্যালয় নীতিনির্ধারকরা তা সরাতে উদ্যোগ নিয়েছেন।
এদিকে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি করেছে।
অনেকে একে ‘ফ্যাসিস্ট মনোভাব’ বলে আখ্যা দিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, নির্দলীয় সরকারের সময়েই যদি তোষামোদের সংস্কৃতি দেখা দেয়, তবে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কেমন হবে।
ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থী ঐশ্বর্য সরকার বলেন, “গ্রাফিতি সবসময়ই প্রতিবাদের ভাষা। জুলাই অভ্যুত্থান উপলক্ষে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাফিতি আঁকায় আগে বাধা দেওয়া হয়েছিল, এখন আবার সরকারের দুর্বলতা ফুটে উঠবে বলে তা মুছে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।” তিনি সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচারেরও দাবি জানান।
গ্রাফিতি অংকন উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রধান রায়হানা আক্তার জানান, গ্রাফিতিতে কোনো বিষয় বাদ দেওয়ার লিখিত নির্দেশ আগে পাননি। ৫ আগস্ট উদ্বোধনের দিন মৌখিকভাবে তাকে মাইলস্টোন দুর্ঘটনা ও মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের অংশ বাদ দিতে বলা হয়। তার ভাষায়, “এভাবে হলে ধর্ষণ বা আত্মহত্যার ঘটনাও বাদ দিতে হয়। গত এক বছরে এমন বহু ঘটনা ঘটেছে, বাদ যায়নি শহীদ পিতার কন্যাও।”
তবে উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব মো. অলি উল্লাহ দাবি করেন, যেহেতু গ্রাফিতি জুলাই অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে করা হয়েছে, তাই সংশ্লিষ্ট বিষয় রাখারই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কলা অনুষদের ডিন ও গ্রাফিতি অংকনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা বলেন, উদ্বোধনের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন না। তবে তার মতে, মূল বিষয়বস্তুর বাইরে চলে যাওয়া চিত্র অপ্রাসঙ্গিক হতে পারে, সেই কারণেই হয়তো তা সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা রবিবার উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয়। এতে গ্রাফিতি মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত বাতিল, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং ভবিষ্যতে বাকস্বাধীনতা বিরোধী পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে