অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন উদ্বাস্তু শিবিরে ইসরাইলের আক্রমণ যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে বলে জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘ বিশেষজ্ঞরা। বুধবার (০৫ জুলাই) বিশেষজ্ঞরা বিবৃতিতে একথা জানান। ওই হামলায় পাঁচ শিশুসহ ১২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া দু’দিনের ওই হামলার সময় বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ভবন ও অন্যান্য অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, চার হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল।
অধিকৃত ফিলিস্তিনে জাতিসঙ্ঘ স্পেশাল রেপোর্টার ফ্রানসিসকা আলবানিস এবং বাস্তুচ্যুত লোকজনবিষয়ক মানবাধিকারবিষয়ক স্পেশাল রেপোর্টার পলা বেটানকার বলেন, ইসরাইলি হামলা ছিল আন্তর্জাতিক আইন ও মানদণ্ডের বরখেলাফ। এটি যুদ্ধপরাধ বিবেচিত হতে পারে।
তারা বলেন, ২০০২ সালে জেনিন ক্যাম্প ধ্বংসের পর থেকে এবারের হামলাই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ।
আলবানিস ও বেটানকার উভয়ে বলেন, ইসরাইলি হামলার সময় অ্যাম্বুলেন্স সেখানে যেতে দেয়া হয়নি, আহত লোকজন চিকিৎসাসেবা পায়নি।
তারা বলেন, গভীর রাতে মারাত্মক ভয় নিয়ে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুর পালানোর দৃশ্যটি ছিল হৃদয়বিদারক। উল্লেখ্য, ১৯৪৭-৪৮ সালে এসব ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।
তারা বলেন, এ ধরনের হামলা চালানো আন্তর্জাতিক আইনে বৈধতা পায় না। এই হামলা ফিলিস্তিনি জনসাধারণের ওপর পাইকারি শাস্তি প্রদানের সামিল। তারা ইসরাইলের অস্ত্র ও কৌশল নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তবে ফিলিস্তিন উদ্বাস্তুদের সহযোগিতায় ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা (ইউএনআরডব্লিওএ)। জেনিনের মেয়র নিদাল ওবেদি আল জাজিরাকে এ কথা বলেন। জেনিনের প্রধান প্রশাসক হিসাবে তারা ইসরাইলের বড় আকারের অভিযানের মুখে কোনো সহায়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ ব্যর্থ হয়ে আমাদের হতাশ করেছে। সংস্থটি দায়িত্ব থেকে তাদের হাত গুটিয়ে নিয়েছে।’
নিদাল ওবেদি আরও বলেন, জেনিনের অনেক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। বিভিন্ন অবকাঠামোসহ পাইপলাইন, সুয়্যারেজ সিস্টেম, এমনকি বৈদ্যুতিক লাইন ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া শরণার্থী শিবির পুনর্র্নির্মাণে জেনিনের পৌরসভা দায়িত্ব নিয়েছে বলে জানান তিনি। আরও বলেন, ক্রুদের সঙ্গে পাশাপাশি তিনিও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গত সোমবার ভোরে জেনিন শরণার্থী শিবিরে ড্রোন হামলার মাধ্যমে তাদের অভিযান শুরু করে। দুদিনের হামলায় লন্ডভন্ড হয়ে গেছে জেনিন শরণার্থী শিবির। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু বিধ্বস্ত আর পুড়ে যাওয়া বাড়ি। রাস্তগুলো ধ্বংসস্তূপে ঢাকা। জায়গায় জায়গায় কাচ আর বুলেটের আবরণ। ইসরায়েলের ব্যাপক এই সেনা অভিযানে কমপক্ষে ১২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ।
জেনিনের ডেপুটি গভর্নর কামাল আবু আল-রুব আনাদোলু নিউজ এজেন্সিকে বলেন, ‘ইসরাইলের আক্রমণে বাড়িঘর ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেনিন শরণার্থী শিবিরের প্রায় ৮০ শতাংশ বাড়ি ধ্বংস, ক্ষতিগ্রস্ত অথবা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।’ এছাড়া কয়েক ডজন যানবাহন ও ইউটিলিটি লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথাও জানান তিনি।