বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং চালু করার কথা ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আজ, আমি মনে করি যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কিছু সময়ের জন্য (প্রতিদিন) বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে বলব, যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানি সংরক্ষণ করা যায়।’
মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসে পিজিআর সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে অনলাইনে কর্মসূচিতে যোগ দেন।
তিনি বলেন, অতীতে ৮-১০ ঘণ্টা লোডশেডিং ছিল যেখান থেকে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে সক্ষম হয়েছে।
সব এলাকায় গণহারে লোডশেডিং হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট এলাকা এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঘোষণা করে এটি করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি আমরা এখন থেকে নির্দিষ্ট এলাকার জন্য লোডশেডিংয়ের সময় নির্দিষ্ট করতে পারি তাহলে আমরা সামনের কঠিন দিনগুলো থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারব।
করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে বিশ্বের অনেক দেশেই বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে।
তিনি বলেন, ডিজেল, জ্বালানি তেল, এলএনজির মতো বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপকরণের দাম ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে।
তিনি সকলকে মিত্যব্যায়ী হয়ে সঞ্চয় বাড়ানোর আহ্বান জানান যা ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের সংকট মোকাবিলায় সাহায্য করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি প্রত্যেক পরিবারের মধ্যে সঞ্চয়পন্থী মানসিকতা গড়ে ওঠে এবং খাদ্যশস্যের সর্বোত্তম উৎপাদনশীলতার জন্য তাদের নিজস্ব জমি ব্যবহার করে, তবে এটি ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে।
তিনি বলেন, সব খালি জায়গা উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করতে হবে, তা যাই হোক না কেন। বাজারের উপর চাপ কমাতে এবং অবশিষ্ট উদ্বৃত্ত খাবার বিক্রি করে লাভ করার জন্য আমাদের নিজেদের খাদ্য উৎপাদনের চেষ্টা করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রত্যেক ব্যক্তি, পরিবার ও প্রতিষ্ঠানকে এ পদক্ষেপ নিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমেরিকা, ব্রিটেনসহ অনেক দেশই বিদ্যুতের স্বল্পতার কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সম্মুখীন হচ্ছে। যদি আমরা সতর্ক থাকি আমাদের কোন সমস্যা হবে না।
ফোর্সেস গোল ২০৩০ অনুসরণ করে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করব না, আমরা শান্তি চাই। এক্ষেত্রে আমরা জাতির পিতার প্রতিরক্ষা নীতি মেনে চলি। তবে একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে হবে, বিশেষ করে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক সংগঠনগুলো গড়ে তুলতে হবে। আমরা সে জন্য পদক্ষেপ নিয়েছি এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করেছি।
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দুর্নীতির অভিযোগ এনে আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্য, মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও সচিবকে অসম্মান করতে চেয়েছিল বা বাংলাদেশকে অসম্মান করতে চেয়েছিল, আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণ করে তাদের যোগ্য জবাব দিয়েছি।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অনন্য জাতিসত্তার বহিঃপ্রকাশ।
শেখ হাসিনা বলেন, এই একটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ সম্পর্কে সারা বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার দারিদ্র্য কমাতে সক্ষম হয়েছে, সব ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছে এবং এমন পদক্ষেপ নিয়েছে যেখানে কেউ গৃহহীন থাকবে না।
সিলেট অঞ্চলের বন্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে কোনো দুর্যোগ যে কোনো সময় আসতে পারে এবং জাতির পিতা শিখিয়েছেন কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি ভালো ভবিষ্যতের জন্য ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এর মতো ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়েছি।
সম্প্রতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় তিনি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।