ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন ও তাঁর মা তাহমিনা বেগমকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হত্যাকারী মোবারক হোসেন (২৯) পেশায় একজন কবিরাজ এবং মাদ্রাসার খাদেম।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
গ্রেপ্তারকৃত আসামির নাম মোবারক হোসেন (২৯)। তিনি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার কাবিরপুর গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের সন্তান। ঢাকা পালিয়ে যাওয়ার পথে দুর্গাপুর থেকে সোমবার তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, জিজ্ঞাসাবাদে মোবারক হোসেন স্বীকার করে যে নিহত তাহমিনা বেগমের মেয়ে সুমাইয়া আফরিন কথিতভাবে ‘জ্বীনে ধরার’ সমস্যায় ভুগছিলেন। এজন্য তাহমিনা বেগম মেয়েকে নিয়ে বাবুস সালাম জমিরিয়া মাদ্রাসার ইলিয়াস হুজুরের কাছে ঝাড়ফুঁক করাতে যেতেন। সেই সূত্রে আসামি মোবারক হোসেনের সঙ্গে তাহমিনার পরিচয় হয় এবং তিনি মোবারককে বাসায় এসে মেয়ের ওপর ঝাড়ফুঁক করার অনুরোধ জানান।
এরপর আসামি একাধিকবার নিহতের বাসায় গিয়ে সুমাইয়া আফরিনকে ঝাড়ফুঁক করেন। প্রায় এক মাস ধরে তিনি নিয়মিতভাবে ওই বাড়িতে যাতায়াত করছিলেন।
ঘটনার দিন সকাল সাড়ে আটটার দিকে মোবারক একটি কমলা রঙের শপিং ব্যাগ ও একটি কালো ব্যাগ নিয়ে নিহতের বাসায় প্রবেশ করেন। সেদিনও তিনি সুমাইয়াকে ঝাড়ফুঁক করেন এবং বাসায় পানি ছিটিয়ে দেন। সকাল ১১টা ২৩ মিনিটে বাসা থেকে বের হয়ে ১১টা ৩৪ মিনিটে আবার বাসায় ফিরে আসেন। ফিরে এসে দেখেন, তাহমিনা বেগম নিজের কক্ষে বিশ্রাম নিচ্ছেন। এরপর তিনি সরাসরি সুমাইয়া আফরিনের কক্ষে গিয়ে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন।
এ সময় তাহমিনা বেগম ঘটনাটি দেখে ফেলেন এবং বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে মোবারক তাহমিনা বেগমকে কক্ষে নিয়ে গিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে তিনি পুনরায় সুমাইয়ার কক্ষে প্রবেশ করে ধর্ষণের চেষ্টা করলে প্রতিরোধের মুখে সুমাইয়াকেও গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
পুলিশ আরও জানায়, আসামির কাছে থেকে চুরি করা চারটি মোবাইল, একটি ল্যাপটপ, মোবাইল ও ল্যাপটপের চার্জার উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া আসামি নিহতের বাসায় যে কমলা রঙের ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করেছিলেন, তা তাঁর বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান বলেন, “প্রেস রিলিজে যা বলা হয়েছে তাই-ই। তদন্তের স্বার্থে এর বাইরে আর কিছু বলা যাচ্ছে না।”
উল্লেখ্য, সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে কুমিল্লা শহরের কালিয়াজুরীর ভাড়া বাসা থেকে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন ও তাঁর মা তাহমিনা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।