ঝালকাঠি জেলা আইনজীবী সমিতিতে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। সমিতির সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও প্রবীণ আওয়ামীপন্থী ১৬ জন আইনজীবীর সদস্যপদ বাতিল করেছে বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে জেলার আইনজীবী মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার (১৭ জুন) দুপুরে আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহাদাৎ হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক মো. নাসিমুল হাসান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে সদস্যপদ বাতিলের বিষয়টি জানানো হয়। তবে চিঠিতে কেন বা কোন ধারা অনুযায়ী সদস্যপদ বাতিল হলো, সে বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।
জানা গেছে, গত ২২ এপ্রিল কার্যনির্বাহী কমিটির এক বৈঠকে সদস্যপদ বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে যাদের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে সমিতির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির, সাবেক পিপি আবদুল মান্নান রসুল, সাবেক সহসভাপতি মঞ্জুর হোসেন ও তাঁর ছেলে মোর্শেদ কামাল, সাবেক জিপি তপন কুমার রায় চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এপিপি আলম খান কামাল এবং আ.স.ম. মোস্তাফিজুর রহমান (মনু), সাবেক সভাপতি মাহাবুবুর রহমান তালুকদার, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব জি.কে মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক এপিপি সঞ্জয় কুমার মিত্র, মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, কার্তিক চন্দ্র দত্ত, সৈয়দ মো. জাহাঙ্গীর শামীম, তানজিলা হক, আবুল বাশার এবং আইনবিষয়ক সম্পাদক এস. এম. রুহুল আমীন রিজভী।
সদস্যপদ বাতিল হওয়া আইনজীবী কার্তিক চন্দ্র দত্ত বলেন, “আমাদের সদস্যপদ অন্যায়ভাবে বাতিল করা হয়েছে। আমরা আইনি পদক্ষেপ নেব।”
এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে সমিতির অভ্যন্তরেও ভিন্নমত দেখা দিয়েছে। সমিতির ভর্তি বিষয়ক সম্পাদক আক্কাস সিকদার বলেন, “শুধু আওয়ামীপন্থী নয়, আরও ৩০ জনের সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সাধারণ সভা ছাড়া এত বড় সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যায় না। ভিজিলেন্স কমিটির সুপারিশ ছাড়া কাউকে এভাবে বাদ দেওয়া সংবিধানসম্মত নয়।”
কার্যনির্বাহী সদস্য এবং যুবদল নেতা আনিসুর রহমান খানও দাবি করেন, “চিঠিতে বলা হয়েছে, সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত। কিন্তু বাস্তবে এমন কিছু হয়নি। আমরা সাধারণ সভায় আলোচনা করার পক্ষে ছিলাম।”
অন্যদিকে, সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও শহর বিএনপির সভাপতি মো. নাসিমুল হাসান বলেন, “আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম। রিপোর্টে উঠে এসেছে যে, পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাঁরা সমিতির সদস্যদের মারধর, হুমকি ও বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাঁদের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে।”
এ সিদ্ধান্ত নিয়ে ঝালকাঠির আইনজীবী মহলে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলছেন, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কেউ বলছেন, এটি একটি দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা।
তবে একাধিক সিনিয়র আইনজীবী মনে করছেন, সমিতির গঠনতন্ত্র মেনে, নিরপেক্ষ তদন্ত ও সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত ছাড়া এত বড় পদক্ষেপ গ্রহণ অনাকাঙ্ক্ষিত এবং ভবিষ্যতে সমিতির ঐক্যে বিভাজন তৈরি করতে পারে।