ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পাশাপাশি মানুষের মৌলিক অধিকার হরণের হাতিয়ার হিসেবে প্রয়োগ হচ্ছে। তাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা ছাড়া এর কোনো সমাধান হবে না বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
গতকাল বুধবার (০৩ মে) বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উদযাপনের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ইউনেসকো, আর্টিকেল নাইনটিন ও টিআইবির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এমন মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘দ্ব্যর্থহীনভাবে জানাচ্ছি, কোনো অবস্থাতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করবে না সরকার, তবে প্রয়োজনে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে মধ্যে কিছু সংশোধন করা হবে।’
জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমরাও মাননীয় মন্ত্রীর মতো দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা ছাড়া এর কোনো সমাধান হবে না। কারণ এই আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার ও অপব্যবহার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পাশাপাশি মানুষের মৌলিক অধিকার হরণের হাতিয়ার হিসেবে প্রয়োগ হচ্ছে। সংশোধন করে এমনকি ঢেলে সাজালেও এই আইনে জনস্বার্থের প্রতিফলন ঘটবে না এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এটি বাতিল করে নতুন করে সাইবার সিকিউরিটি আইন প্রণয়ন করা উচিত।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন তাই নয়, বরং এমন সব দেশের কাতারে যারা হয় যুদ্ধ-বিধ্বস্ত, গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত বা চরম স্বৈরতান্ত্রিক শাসনাধীন, যার কোনোটাই বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ডিজিটাল আইন বাতিল করা ছাড়া বিকল্প নেই।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গুয়েন লুইস বলেন, ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে আমরা নিজেদের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছি। সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা, যেখানে শুধু জনস্বার্থকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। এর সুরক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।’
প্যানেল আলোচনায় ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যখন প্রণয়ন করা হলো, তখন বাংলাদেশে মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল এবং সেই যুদ্ধ শেষ হয় মেজর সিনহার মৃত্যুর মাধ্যমে। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার কিছু নেই বরং গণমাধ্যমের কাজের সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সবার কাজ করতে হবে।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্দ্রা বার্জ ভন লিন্ডে বলেন, ‘বাংলাদেশে গণমাধ্যমকর্মীদের মাত্র দশ শতাংশ নারী এবং তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকেন না। এই পেশায় অন্যান্য সব বিষয়ের পাশাপাশি গণমাধ্যমের শীর্ষ পর্যায়ে নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি পাওয়া জরুরি। আমরা বাংলাদেশের গণমাধ্যমের মানোন্নয়ন ও স্বাধীনতা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছি এবং করে যাব।’
অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘অযৌক্তিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে আইনমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকার পরও অনেক ক্ষেত্রে তা মানা হয় না। এমন অবস্থায় আমরা আমাদের অধিকার কীভাবে নিশ্চিত করব এই প্রশ্ন রেখে যেতে চাই।’