শনিবার, জানুয়ারি ১৮, ২০২৫
Homeক্যাম্পাসঢাকা কলেজের হলে রাতভর শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ

ঢাকা কলেজের হলে রাতভর শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ

১৮ জানুয়ারি, ২০২৫

ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি: ঢাকা কলেজের দক্ষিণায়ন হলে ‘ম্যানার’ শেখানোর নামে সিনিয়র কর্তৃক জুনিয়রকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) রাত ১ টা থেকে রাত ৪ টা পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতন চালান অনার্স চতুর্থ বর্ষের একদল শিক্ষার্থী।

নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর নাম মারুফ রেজা। তিনি ২০২১-২২ সেশনের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী।

এ ঘটনায় জড়িত রয়েছেন ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক হাবিব হাওলাদার শিহাব ওরফে আশফাকুর রহমান শিহাব। তিনি হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। এছাড়াও নির্যাতনে জড়িত অভিযুক্তরা হলেন– ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আল রাহাত ওরফে আফজাল হোসাইন, অর্থনীতি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সালাউদ্দিন ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান অর্নব।

নির্যাতনের সাথে জড়িত আল রাহাত
বলেন, “নির্যাতনের বিষয় না এটা, তার সাথে কথা বলা যাকে বলে। একটা ছেলে যদি বেয়াদবি করে, সরি বলেনি উল্টো সিনিয়র আনার হুমকি দিয়েছে। আমার রুমে গেস্ট আসতেই পারে, গেষ্টের সাথে যদি সে বেয়াদপী করে সেক্ষেত্রে ক্ষমা না চায় তাহলে রুমে থাকা ঠিক হবে কিনা। মারধর তো আর করিনি গালাগালি বলতে কি রকম সরি না বলে যখন চুপ করে থাকে, চোখ পাকায় সেক্ষেত্রে রাগ হবে এটা স্বাভাবিক।”

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর লেখা ফেসবুক পোস্টটি ফেস দ্যা পিপল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো– “আমি মারুফ রেজা ঢাকা কলেজের ইংলিশ বিভাগের ২য় বর্ষের (২১-২২ সেশনের) ছাত্র। গতকাল রাতে আমার জীবনের সব থেকে জঘণ্য কালো অধ্যায়ের রচনা হয়। ঢাকা কলেজের দক্ষিণায়ণ হলে ৩০১ নাম্বার রুমে গতকাল রাত ১ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত আমার উপর চলে অকথ্য নির্যাতন। যারা নির্যাতন করে তারা হলো, রাহাত ( দক্ষিণায়ণ ৩০১, ম্যানেজমেন্ট ৪র্থ বর্ষ), সালাউদ্দিন (পরিচয় জানতে পারিনি), শিহাব (৪র্থ বর্ষ, নর্থ হল) এবং অর্ণব (৪র্থ বর্ষ, ম্যানেজমেন্ট বিভাগ,দক্ষিণায়ণ)। সালাউদ্দিন ভাই রুমে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছিলো। এক পর্যায়ে আমি সালাউদ্দিন ভাই কে বলি ভাইয়া গালাগালি কইরেন না ছোট ভাই পড়ছে পাশে, এর পর আমার উপর তেড়ে আসে মারার জন্য। এক পর্যায়ে আমার রুমের রামিম ভাই এবং ৪ তলার রাহাত ভাই ঠেকাতে আসলে তাদের গালাগালি করে।”

“এর পর রাহাত ভাই নর্থ হল থেকে সিয়াব ভাইকে ডেকে এনে রুম আটকায় দেয়। এর পর রাত ১ টা থেকে ৪ পর্যন্ত আমার উপর নির্যাতন করে এবং এক পর্যায়ে আমি স্যারদের বলার জন্য ফোন দিতে গেলে আমাকে ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমি সেসময় কি করবো বুঝতে পারছিলাম না তখন ডিপার্টমেন্ট বন্ধু সিআর ইমরানকে কল দিয়ে বাঁচাতে বললে সে রাত সাড়ে ৪ টাই আমার হলে নিচে আসে তারপর আমি বের হই। তাকে সব বলি সে আমাকে কলেজ গেইট পযর্ন্ত এগিয়ে দিয়ে যাই তারপর সেখান থেকে বড় ভাইয়ের ঢাবির হলে ঢুকে পড়ি। তারপর সকালে বাড়ি চলে আসছি।”

নির্যাতনের সময়কার ২৪ মিনিটের একটি অডিও ক্লিপ থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে গালাগালি ও হেনস্থা করতে শোনা যায়। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলা হয়। তরে কে বাচাবে ? তোর কে বড় ভাই আছে ? তাকে ফোন দে , ইত্যাদি বলা হয় এই কথা বলার পর বেশ কয়েকটি  মারের শব্দ শোনা যায়। পুরো সময়জুড়েই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শোনা যায়।

শিক্ষার্থী নির্যাতনে ছাত্রদলের এক নেতা জড়িত থাকার বিষয়ে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি শাহীনুর রহমান শাহীন বলেন, ঘটনাটা আমাদের এখনো কানে আসেনি।আমরা এখন ঘটনার জাস্টিফাই করবো।জড়িত থাকলে অবশ্যই সাংগাঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ঘটনার সত্যতার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করে কাল দিনের মধ্যে আমরা একশ্যানে যাবো।

নির্যাতনের ঘটনার বিষয়ে ঢাকা কলেজ দক্ষিণায়ণ হলের প্রভোস্ট জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি অবশ্যই শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। শুরুতে যদি আমি কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ না করি তাহলে এটা অন্য রুমেও ঘটতে পারে। এমন পদক্ষেপ নিবো যেন ভবিষ্যতে শিক্ষা হয়ে থাকে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মারুফের সাথে ফোনে কথা হয়েছে। ও বাড়িতে চলে গেছে। যেহেতু ও নাই এজন্য পদক্ষেপ নিতে পারছি না। আমি অধ্যক্ষ স্যারের সাথে কথা বলেছি। হলের শৃঙ্খলাবিরোধী যেকোন বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবো।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ কে এম ইলিয়াস বলেন, ঘটনাটি বিস্তারিত জানার জন্য আমি হল প্রোভোস্টকে ডেকেছি। হল প্রোভোস্টের বক্তব্য অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

spot_img

সর্বশেষ

আরও সংবাদ