ঢাবি প্রতিনিধি: ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পোস্টার লাগিয়েছে ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও এসব হল এলাকায় এসব রাজনৈতিক কর্মসূচী শিক্ষার্থীদের ক্ষিপ্ত করে তুলেছে।
জানা যায়, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন শাওনের নেতৃত্বে টিএসসিসহ ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এবং অধিকাংশ আবাসিক হলের প্রধান ফটক ও দেয়ালে এসব পোস্টার লাগানো হয়।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদল বা বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলোর কোনো প্রচার-প্রকাশের সুযোগ না থাকলেও সরকার পতনের পর এই অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকারিতা হারায়। যার ফলস্বরূপ ছাত্রদলকে প্রকাশ্যে বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজ করতে দেখা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর অংশ হিসেবেই ছাত্রদলের এই কর্মসূচি, যার ফলে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো ক্যাম্পাস।
ক্যাম্পাসজুড়ে এই পোস্টার লাগানো কর্মসূচির সমালোচনা করতে দেখা গেছে এক দল সাধারণ শিক্ষার্থীকে। এ প্রসঙ্গে এম এইচ মোবিন নামে এক ঢাবি শিক্ষার্থী “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ -২” নামে এক ফেসবুক গ্রুপে লেখেন, গতকাল ক্যাম্পাসের একাংশ পরিষ্কার করেছে ছাত্রদল। নিঃসন্দেহে এটা সেরা কাজ ছিল। কিন্তু হলগুলোর দেয়ালে দেয়ালে পোস্টারের বন্যা বহিয়ে দিচ্ছে যে, এই জঞ্জাল কে পরিষ্কার করবে?ছাত্রলীগ যা যা করতো, আপনারাও যদি তাই করেন তাহলে পার্থক্য কোথায় থাকলো?
এই স্ট্যাটাসের কমেন্ট বক্সে শাহীন সবুজ নামে একজন লেখেন, না উনাদের সমালোচনা করা যাবে নাহ। তাইলেই আপনি বাম অথবা ডান অথবা শিবির অথবা লীগের দোসর। আর উনারা আসমানের ফেরেশতা একেকজন। কিছু বললেই অমুকে এটা করলে তো বলেন নাহ। আরেহ ভাই সমালোচনা শুনে সেসব যাচাই করুন। ভুলত্রুটি থাকলে শুধরে নিয়ে সামনে এগিয়ে যান। নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করেন। না, আপনারা সেই লীগের মতো ব্যক্তিগত আক্রমন করেন। ট্যাগিং করেন। থ্রেট দেন। অথচ বাক স্বাধীনতার জন্য নাক যুদ্ধ করে শহীদ হয়ে যাচ্ছেন।
ঢাবি শিক্ষার্থী মিফতাদুল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসে পোস্টারিং নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। পোস্টার লাগানোর জন্য নির্দিষ্ট যায়গা থাকা উচিত। সবাই যে যার মতো ঢালাওভাবে পোস্টারিং করে। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় বাদই দেন, দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোও এমন ঢালাও পোস্টারিং করে না। একটা সিঙ্গেল দেয়াল নেই যেখানে পোস্টারিং হয় না৷ একাডেমিক ভবনেরও সিড়ি দেয়াল, সবখানে পোস্টারের উপস্থিতি। এটা কোন সুস্থ কালচার না। অত্যন্ত বিদঘুটে লাগে দেখতে। এমনও দেখা যায় একই দেয়ালে একই জিনিসের ২০ বা ৩০ টা পোস্টার লাগানো। মনে হয় পোস্টার লাগানোর প্রতিযোগিতা চলে। শিক্ষিত পরিবেশ এমন হয়?
মনিরুল ইসলাম মনির নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ না হওয়া মানে পুনরায় ছাত্রদলের মাধ্যমে ছাত্রলীগের পুনর্বাসন।
রাকিব হাসান নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লেখেন, পোস্টার তো সবাই লাগায়, দোষ হয় শুধু মিলনের (জাতীয় পার্টি নেতা সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন)। এরকম অশ্লীল কাজ-কর্ম করে প্রিয় রাজনৈতিক দলের নেতারা কি প্রমান করতে চান? ছাত্রলীগের মতো ফিরে আসতে চান? অশ্লীল অর্থ হচ্ছে সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে, বিশ্রী দেখাচ্ছে।
ছাত্রদল জানায়, তাদের এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক মো. আল আমিন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ তালুকদার সাব্বির, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইকরাম খান, মেহেদী হাসান, তানভীর হাসান মিঠু, সাইফ উল্লাহ সাইফ, সহ-সাধারণ সম্পাদক এস এম হাসান, সমাজসেবা সম্পাদক আবুজর গিফারি মাহফুজ, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শোয়াইব ইসলাম ওমি, সহ-সপ্তর সম্পাদক শাহরিয়ার লিওন, মুজিবুর রহমান মাইকন, মাহবুবুর রহমান জয়, মেহেদী হাসান জনি, হাবিবুর রহমান আসিফ, শামসুল হক আনান, রাহাদ আহমেদ, অন্তর আহমেদ অন্তু, শাকিল, মাসুম, মুজাহিদুল ইসলাম সরকার, মুজাহিদুল সরকার সাইমন, হৃদয় আহমেদ প্রমুখ।
আরও উপস্থিত ছিলেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইমন মিয়া, দপ্তর সম্পাদক রেদোয়ান জয়, সহ-সাধারণ সম্পাদক তাইমুন, প্রচার সম্পাদক সৈয়দ ইয়ানাথ ইসলাম, ক্রীড়া সম্পাদক সাকিব হোসেন, কর্মী এমদাদুল, সাগর, আসিফ, জগন্নাথ হল ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক সত্যজিত দাস, শুভ মোদক, রঞ্জন দাস, উত্তম চন্দ্র দাস, দনওয়াই ম্রো (ডন), সোহাগ দাস, হ্রষিকেশ কুন্ডু, প্রসেনজিৎ বিশ্বাস প্রমুখ।