ঢাবি সংবাদদাতা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলের বহুতল বিশিষ্ট ভবনের যমুনা ব্লকের উপর থেকে পড়ে কাজী ফিরোজ নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর তার পড়ার টেবিলে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে।
নোটটিতে “এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আমার কোনো অধিকার নাই। সরি মা! বাড়ি থেকে তোমাকে দিয়ে আসা কথা রাখতে পারলাম না। আমার জীবন নিয়ে হতাশ।” এ ধরনের আবেগজড়িত ও হতাশাপূর্ণ লেখা দেখা যায়।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এরপর আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে রাখলে রাত একটার পর তার মৃত্যু হয়। মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া রাত সোয়া ১টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড কালচার বিভাগের (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) অধ্যয়নরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়।
ঘটনার কিছুক্ষণ পূর্বে ফিরোজের কয়েকজন সহপাঠী তাকে একাত্তর হল এলাকায় খুঁজছিলেন বলে জানা যায়। তারা জানান, দীর্ঘসময় ধরে তার মুঠোফোন বন্ধ দেখাচ্ছিলো।
এদিকে, ফিরোজের মৃত্যুর পর জিয়া হলের ২০৩ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, তার টেবিলের উপর একটি প্যাড খাতা অর্ধ খোলা অবস্থায় রাখা।
খাতা খুলে দেখা যায়, পৃষ্ঠার ওপরে তারিখ (১৯/০৯/২৩) উল্লেখ করে এর নিচে লিখা, ‘মানুষ বাঁচে তার সম্মানে। আজ মানুষের সামনে আমার যেহেতু সম্মান নাই। এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আমার কোনো অধিকার নাই। আমারে মৃত্যুর দায়ভার একান্ত আমার। সরি মা! বাড়ি থেকে তোমাকে দিয়ে আসা কথা রাখতে পারলাম না। আমার জীবন নিয়ে হতাশ।” এই লেখা সম্বলিত প্যারার নিচে মাঝ বরাবর “ফিরোজ” এবং তার নিচে লিখা হয়েছে “রাত: ১১টা ৩”।
পৃষ্ঠার দ্বিতীয় প্যারায় লেখা ছিল, “আমার ওয়ালেটের কার্ডে কিছু টাকা আছে। বন্ধুদের কাছে অনুরোধ রইলো মায়ের হাতে দিতে। আমার লাশের পোস্টমর্টেম না করে যেন বড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কোনোরূপ আইনি ঝামেলায় কাউকে যেন জড়ানো না হয়। সবাই বাঁচুক। শুধু শুধু পৃথিবীর অক্সিজেন আর নষ্ট করতে চাই না।” এই লেখার নিচেও “ফিরোজ” এবং তার নিচে “রাত ১১টা ৫” লেখা ছিল।
ফিরোজের এই মৃত্যুর ঘটনা আত্মহত্যা বলে দাবি করেছেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন।
এছাড়া, তার বন্ধু-বান্ধবদের অধিকাংশ বলছেন, ‘ফিরোজ বেশ কয়েকদিন ধরে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন এবং তিনি কয়েকদিন আগে ফেসবুকেও আবেগজনিত স্ট্যাটাস দিয়েছেন।’
গত ৬ সেপ্টেম্বর করা তার এক ফেসবুক পোস্টে দেখা যায় তিনি লিখেছিলেন, ‘মানুষ যেভাবে বাঁচতে চায়, তাকে সেভাবে বাঁচতে দেয়া হোক। সবাই বাঁচুক, আপন প্রাণে আপন চাওয়াতে মানুষ বাঁচুক।’
এরপর আরেকটি ফেসবুক পোস্টে ফিরোজ লেখেন, ‘সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি সবই সুন্দর। আপনার কাছে যা ভালো লাগে না সৃষ্টি কর্তা সেটাও সৃষ্টি করেছে। যেমন: মানুষ। সুতরাং কাউকে তাচ্ছিল্য করা উচিৎ নয়। প্রভুর প্রশংসা করুন।’
স্বর্ণালি ইয়াসমিন নামে ফিরোজের এক সহপাঠী ফেসবুকে জানান, ফিরোজ ডিপ্রেসড (দুশ্চিন্তাগ্রস্ত) ছিলেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী ফিরোজ নামে এক ছাত্র বিজয় একাত্তর হলের উপর থেকে পড়ে যাওয়ার পর মেডিকেলে আনার কিছুক্ষণ পরেই তার মৃত্যু হয়। তিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত যতটুকু এভিডেন্স আমাদের কাছে আছে, এটা একটা সুইসাইড (আত্মহত্যা)। কারণ, তার সুইসাইড নোটও পাওয়া গেছে। সে যখন রুম থেকে বের হয়েছে, তার মোবাইল, মানিব্যাগ, সুইসাইড নোট রুমে রেখে গেছে।
আত্মহত্যা সম্বলিত এই নোটে কী লেখা ছিলো তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নোটে “এই পৃথিবীতে আমার বেঁচে থাকার প্রয়োজন নেই”, ” মা, তোমার কথা রাখতে পারলাম না” এরকম ধরনের কিছু লেখা ছিলো। এছাড়া, নোটে তার লাশ যেন পোস্টমর্টেম না করা হয় সেটিও লিখা ছিলো।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন আরো বলেন, ফিরোজের লাশটি তার পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।