মানিকগঞ্জের সদর ও সিংগাইর উপজেলায় তিনটি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। রবিবার (২৩ মার্চ ২০২৫) অবৈধভাবে পরিচালিত এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে এ অভিযান চালানো হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট উইং-এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়জুন্নেছা আক্তারের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে সহযোগিতা করে অধিদপ্তরের মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের সিনিয়র কেমিস্ট এ কে এম সামিউল আলম কুরসি, পরিদর্শক মনোয়ারুল ইসলাম, র্যাব-৪, জেলা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।
পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৯’ এর বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে সিংগাইরের রাকমান ব্রিকসের কিলন আংশিক ভেঙে ফেলা হয়। ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় আগুন নিভিয়ে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। একইসাথে সদর উপজেলার একতা ব্রিকস ও এমিকা ব্রিকসকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় এবং কিলনের আংশিক অংশ ভেঙে দেওয়া হয়।
সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য: চাঁদাবাজির অভিযোগ
এদিকে স্থানীয় ইটভাটা মালিকরা অভিযোগ করেছেন, একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে মানিকগঞ্জের ইটভাটা শিল্প নিয়ন্ত্রণ করছে। সদর উপজেলার খোলাপাড়ায় অবস্থিত এ সিন্ডিকেটের কার্যালয় থেকে পরিচালিত হয় পুরো কার্যক্রম। সভাপতি ইলিয়াস, সেক্রেটারি কুদ্দুস ও ক্যাশিয়ার মোয়াজ্জেমের নেতৃত্বে প্রতি ভাটা থেকে বছরে প্রায় দেড় লাখ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়।
এই সিন্ডিকেটের পেছনে রয়েছেন ঢাকায় বসবাসরত প্রভাবশালীরা — শামীম, রুমি, শরীফ মল্লিক ও জাফর ইকবাল। কুদ্দুস নিজে প্রায় ১১-১২টি ইটভাটার মালিক হলেও অধিকাংশ ভাটা তিনি অন্যদের কাছে ভাড়ায় পরিচালনা করাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বারবার অভিযানেও প্রশ্ন থেকে যায়
স্থানীয়দের অভিযোগ, অনেক ভাটায় মাসের ব্যবধানে একাধিকবার অভিযান চালানো হলেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। সিংগাইরের সফুর ব্রিকস ও রহমান ব্রিকস মাসে চারবার অভিযান ও জরিমানার মুখে পড়ে। এরপরও পরবর্তী মাসে আরও দুটি অভিযানের শিকার হয়।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, এসব অভিযানের পেছনে মাঝে মাঝে সিন্ডিকেটের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও কাজ করে। কখনও জরিমানা, কখনও চিমনি ভেঙে দেওয়া হলেও একই অপরাধ বারবার ঘটছে।
আইন অমান্য করে স্থাপন ইটভাটা
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী স্কুল, কলেজ, মসজিদ ও মাদ্রাসার নির্ধারিত দূরত্বে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ ইটভাটা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মাত্র ৬০০-৭০০ ফুট দূরত্বে অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এ বিষয়ে বারবার অভিযানের কারণ জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনেক কর্মকর্তা কোনো স্পষ্ট উত্তর দিতে চাননি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সতর্কতা
পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ছাড়পত্রবিহীন অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। পরিবেশ রক্ষায় ভবিষ্যতে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়