রাজধানীর হাতিরঝিল থানা পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যু হওয়া তরুণ সুমন শেখের (২৬) লাশ তার বাবা পরিবারকে বুঝিয়ে দিয়েছে পুলিশ।
সোমবার(২২ আগস্ট) বেলা পৌনে ৩ টায় লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হয় বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ পুলিশ কমিশনার ফারুক হোসেন( মিডিয়া)।
তিনি বলেন, পুলিশের কাছ থেকে সুমনের মরদেহ বুঝে নিয়েছেন তার বাবা। এখন গোসলের জন্য তার মরদেহ রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নেওয়া হয়েছে। তার পরিবার জানিয়েছে, সুমনের মরদেহ গ্রামের বাড়ি নবাবগঞ্জে অথবা ঢাকার আজিমপুরে দাফন করা হবে।
সুমনের স্ত্রী জান্নাতের ভাই মোশারফ হোসেন জানান, সোমবার তারা মামলা করতে আদালতে গেছেন। সুমনের বাবার কাছে পুলিশ মরদেহ হস্তান্তর করেছে। তারা (সুমনের শ্বশুরবাড়ি) কেউ মরদেহ নিতে যাননি।
তবে নিহতের স্ত্রী জান্নাত অভিযোগ করেন, মর্গে তারা মরদেহ আনতে গেলেও পুলিশ মরদেহ দেয়নি। তারা বলছে, মরদেহ যদি ঢাকার নবাবগঞ্জের বক্তনগর গ্রামের বাড়ি নেওয়া হয়, তাহলে দেওয়া হবে। কিন্তু পশ্চিম রামপুরার বাসায় নেওয়া হলে দেওয়া হবে না। রামপুরার বাসায় মরদেহটি নেওয়া হলে স্থানীয় ও স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পুলিশ সেই আশঙ্কার কারণেই মরদেহ দিতে চাচ্ছে না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, আমি তেজগাঁও-এর ডিসির (ডেপুটি পুলিশ কমিশনার) সঙ্গে কথা বলেছি। ওরা কেউ মরদেহ নিতে আসেনি। মরদেহ কেন দেওয়া হবে না। ওরা আদালতে গিয়ে বসে আছে।
গত শুক্রবার একটি চুরির মামলায় সুমনকে গ্রেপ্তার করে থানার হাজতখানায় রেখেছিল পুলিশ। শনিবার সেখান থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, সুমন হাজতখানার লোহার গ্রিলের সঙ্গে গলায় পরনের প্যান্ট পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আত্মহননের দৃশ্য স্পষ্ট।
পুলিশের দায়িত্ব অবহেলার কারণে রুমনের মৃত্যু হয়েছে। যথাযথ দায়িত্ব পালন করলে তিনি গলায় ফাঁস দেওয়ার সুযোগ পেতেন না কোনোভাবেই অভিযোগ তার স্বজনদের।
এ ঘটনায় হাতিরঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হেমায়েত হোসেন ও কনস্টেবল শেখ জাকারিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
স্বজনরা জানিয়েছে, সুমন নামে গ্রেপ্তার করা হলেও তার আসল নাম সুমন না, রুমন। তার বড় ভাইয়ের নাম সুমন শেখ। রুমনের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) না হওয়ায় ভাইয়ের এনআইডি দিয়ে চাকরি নিয়েছিলেন। ওই থেকে রুমন হয়ে যান সুমন।
রুমনের স্বজনরা জানান, তার বাসা পশ্চিম রামপুরার ওয়াপদা রোডে। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী জান্নাত ও সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তিনি। গত বছরে তার মা মারা গেছেন। শুক্রবার বিকেলে মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ওয়াপদা রোডের বাসায় মিলাদ মাহফিলের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন রুমন।
এদিন বিকেল ৪টার দিকে হাতিরঝিল থানা পুলিশ একটি চুরি মামলায় তাকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এরপর তাকে থানার হাজতখানায় রেখে দেওয়া হয়।