অতিরিক্ত ৭ মিনিটের ম্যাচ গড়াল ১০ মিনিট পর্যন্ত। শেষ সেকেন্ডে কর্নার। আল-আমিনের কাছ থেকে বল পান ফাহিম। সেখান থেকে ক্রসে তারিক কাজীর হেডটাও ছিল নিখুঁত। কিন্তু সিঙ্গাপুর গোলরক্ষকের দুর্দান্ত সেইভে গোলবঞ্চিত বাংলাদেশ। ড্র করার সুযোগটা হারায় বাংলাদেশ।
২-১ গোলে হারের ম্যাচে শেষ সেকেন্ডের এই আক্ষেপটাই পুরো ম্যাচের চিত্র। পুরো ম্যাচে সমানতালে লড়েও হারটাই সঙ্গী হলো সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের ম্যাচে।
ম্যাচ শেষে স্টেডিয়ামের সমর্থকরা গলা ফাটিয়েছেন বাংলাদেশ বাংলাদেশ চিৎকারে। ম্যাচটায় যে বাংলাদেশ দারুণ পারফর্ম করেছে তারই নমুনা দর্শকদের এমন সাড়া।
বাংলাদেশ ম্যাচটা জিতে ফিরতে পারেনি। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে চোখে চোখ রেখে লড়েছে। তবে হামজা-সামিতদের আগমনেই ফুটবলের চিত্র আমূল বদলে যাচ্ছে না- সেই বাস্তবতাও দেখেছে বাংলাদেশের ফুটবল। একাধিক ভুলের খেসারতও দিতে হয়েছে। ২-১ গোলের হার দিয়ে ম্যাচ শেষ করেছে বাংলাদেশ।
প্রথমার্ধে ম্যাচের ফলাফল ছিল সিঙ্গাপুরের পক্ষে। তবে ম্যাচটাকে একপেশে বলার সুযোগ ছিল না সেই অর্থে। দুই দলই লড়েছে সমানতালে।যদিও বাংলাদেশ একাধিকবার সুযোগ মিস করেছে। সামিত সোমের একাধিক ডিফেন্সচেরা পাস যেমন রাকিব কাজে লাগাতে পারেননি। তেমনি বাংলাদেশ গোলটাও হজম করেছে নিজেদেরই ভুলে।
এর আগে প্রথমার্ধের একেবারে অন্তিম সময়ে গোল হজম করে স্বাগতিকরা। ৪৩ মিনিটে বাম প্রান্ত থেকে তারা লম্বা থ্রো ইন করে। বাংলাদেশের গোলরক্ষক মিতুল মারমা পোস্ট থেকে বেরিয়ে এসে বলের লাগাল পেলেও পুরোপুরি গ্রিপ করতে পারেননি। জর্ডান এমবইয়ের হেডে বল পান হারিস স্টুয়ার্ট। তার বাড়ানো বল বাংলাদেশের জালে ঠেলে দেন সং উই ইয়ান। সিঙ্গাপুরের দুই ফুটবলারের পা ঘুরলেও বাংলাদেশের গোলরক্ষক পোস্টে ফিরতে পারেননি।
হামজা চৌধুরি গোল লাইন ক্লিয়ারের চেষ্টা করেছিলেন। গোললাইন ক্রস করার পর তার পায়ে লেগেই বল আরও ভেতরে প্রবেশ করে।
বাংলাদেশ যে সুযোগ একেবারেই পায়নি তাও বলা চলে না। ১৫ মিনিটে শাকিল আহাদ তপু একক প্রচেষ্টায় ডান প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে প্রবেশ করেন। তার বাড়ানো বলে রাকিব পা ছোঁয়ালেও বল জালে পাঠাতে পারেননি। ৩৩ মিনিটে ফাহমিদুলকে বক্সের সামনে ফেলে দেওয়ায় বাংলাদেশ ফ্রি কিক পায়। হামজা চৌধুরির নেওয়া ফ্রি কিক শট অল্পের জন্য পোস্টের ওপর দিয়ে যায়। ৩৯ মিনিটে সামিতের বাড়ানো বলে ফাহমিদুল এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শট নিলেও ব্লক হয়।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে শুরুটা বাংলাদেশের জন্য নড়বড়ে। সেই সুবাদে সিঙ্গাপুর একটা গোল হজমও করে। শুরুতেই বদল এসেছিল একটি। অফ দ্য বলে আজ নড়বড়ে ছিলে কাজেম শাহ। তাকে উঠিয়ে আক্রমণের শুরুতেই ভাল ব্লক করেছিলেন তপু বর্মণ। তবে ক্লিয়ারেন্স ভাল হয়নি। মাঝমাঠ থেকে শামি হাইসিনের জোরালো শট ঠেকিয়েই দিয়েছিলেন মিতুল মারমা। সেখান থেকে রিবাউন্ডে আসা বলটা জালে পাঠান ইখসান ফান্দি।
যাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি শঙ্কা ছিল, সেই ফান্দিই বিপদ ডাকলেন বাংলাদেশের জন্য। দুই গোল হজম করা বাংলাদেশ ৫৮ মিনিটের সেই গোলটা বাংলাদেশ শোধ করেছে ৬৭ মিনিটে এসে। দুই গোল হজম করেও কিছুটা ইতিবাচক খেলাই উপহার দিচ্ছিল বাংলাদেশ। যদিও সেখান থেকে কার্যকর কিছু আসেনি। ফাহমিদুল একাধিকবার এদিন সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি।
তবে একাধিক সুযোগ নষ্টের প্রায়শ্চিত্ত করেছেন রাকিব। আগের ম্যাচে গোলের পর এদিন অ্যাসিস্ট করেছেন হামজা চৌধুরী। চকিতে থ্রু পাস বাড়িয়েছিলেন। সেটাকে গোলে পরিণত করে জাতীয় স্টেডিয়ামে নতুন জোয়ার আনেন রাকিব।
১ গোল শোধের পর ম্যাচের লাগামটা বাংলাদেশই ধরে রেখেছিল। সুযোগ এসেছিল বটে, তবে কাজে লাগানো হয়নি। এমনকি ম্যচের ৮০ মিনিটের পর টানা চারটা কর্ণারও আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। ছিল লম্বা থ্রো-য়ের চিরচেনা আক্রমণটাও। তবে এমন এক রাতে আক্ষেপই ছিল হামজা-সামিতদের সঙ্গী।
অতিরিক্ত সাত মিনিটেও বাংলাদেশই ছিল এগিয়ে। ডিফেন্সে নার্ভ ধরে রেখে যেমন আক্রমণ সামলেছে, তেমনি আক্রমণেও মুন্সিয়ানা দেখিয়েছিলেন আল আমিন, ফাহিমরা। অধিনায়ক জামাল ভূইয়ার মাঠে নামা হয়নি এদিন। তবে কোচ ক্যাবরেরার বাকি বদলগুলোর মাঝে ফাহিম এদিন ছিলেন উজ্জ্বল।