ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরব যান গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার এক যুবক। সেখানে গিয়ে এখন কারাগারে দিন গুণতে হচ্ছে তাকে।
ভুক্তভোগী আশরাফুল ইসলাম (৩৫), শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পূর্বখণ্ড এলাকার মৃত হারেস আলীর ছেলে। গত তিন মাস ধরে তিনি সৌদি আরবের একটি কারাগারে আটক রয়েছেন বলে দাবি করছে তাঁর পরিবার।
আশরাফুলের স্ত্রী জানান, প্রতিবেশী বিল্লাল হোসেনের ছেলে আকবর আলীর মাধ্যমে তাঁর স্বামীকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়। সে কয়েক বছর ধরে সৌদি প্রবাসী।
আকবর সৌদি থেকে ছুটিতে দেশে এসে আশরাফুলকে বৈধ ভিসায় হোম ডেলিভারির চাকরি ও ৮০ হাজার টাকা মাসিক বেতনের প্রলোভন দেখায়। প্রলোভনে পড়ে আশরাফুল সৌদিতে চাকুরির জন্য ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা চুক্তির মাধ্যমে আকবরকে বুঝিয়ে দেয় এবং আশরাফুলকে সৌদিতে পাঠানো হয়।
সৌদিতে পৌছার পর আশরাফুলকে কোনো কাজ না দিয়ে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য তার পরিবারের নিকট আরও এক লক্ষ টাকা দাবি করে আকবর।
আশরাফুলের পরিবার আকবরের দাবি করা এক লক্ষ টাকা পাঠানের পরও চাকরি না দিয়ে উল্টো তাঁকে পুলিশে ধরিয়ে দেন বলে দাবি ভুক্তভোগীর পরিবারের।
আশরাফুলের স্ত্রী মোর্শেদা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী অবৈধভাবে তিন মাস কাজ করার পর আকবর টাকা না দিয়ে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে। আমি তিন সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে আছি।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আকবরের বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়েও প্রতারণার শিকার হন তিনি। স্থানীয় সোহেল সরকার, কবির সরকার, আনোয়ার ও রাসেল সরকার তাঁকে মামলা করতে বলেন এবং মামলা পরিচালনার দায়িত্ব নেন সোহেলের ভগ্নিপতি, যিনি একজন আইনজীবী। এই মামলার জন্য তাঁর কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। মামলার তদন্ত যায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এ। কিন্তু মামলার স্বাক্ষীরা আকবরের পক্ষেই সাক্ষ্য দেন। ফলে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন।
এ বিষয়ে কেওয়া পূর্বখণ্ড এলাকার স্থানীয় মুক্তার মিয়া বলেন, আশরাফুল খুব ভালো ছেলে ছিল। ওর পরিবারের অবস্থা এখন খুব খারাপ। দালালদের কারণে একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আকবরের বিচার চাই আমরা।
স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, দালালের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কেউ যেন এভাবে আর প্রতারিত না হয়। আমরা দালালদের কঠিন বিচার চাই।
ওমর আলী নামের একজন প্রতিবেশী বলেন, আশরাফুলের মতো আরও অনেকেই প্রতারিত হচ্ছে। প্রশাসনের উচিত এই দালাল চক্রকে ধরিয়ে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা।
অভিযুক্ত সোহেলকে আজ সকাল ১১.৫০ মিনিটে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আকবর আলীর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
শ্রীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বারিক বলেন, ‘এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’