কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় সারাদিন মোটরসাইকেলে ঘুরিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তাসিন (৬) নামে এক শিশুকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সৎবাবার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মুরাদ হোসেন নামে ওই সৎবাবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শনিবার (৯ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের ছড়ারপাড় গ্রামের পুকুরে ফেলে দেওয়া হয় শিশুটিকে। পরে এক পথচারী তাকে পুকুর থেকে জীবন্ত উদ্ধার করেন।
শিশু তাসিন লালমনিরহাট জেলার সখের বাজার এলাকার মৃত তারা মিয়ার ছেলে। গ্রেপ্তারকৃত মুরাদ হোসেন একই উপজেলার সাপ্টানা গ্রামের আকবর আলীর ছেলে।
তাসিন জানায়, বাবার মৃত্যুর পর বড়ভাই বিপ্লবসহ মা ববিতা বেগমের কাছেই থাকতো তারা। ৬/৭ মাস আগে লালমনিরহাট সদরের সাপটানা এলাকার আকবর আলীর ছেলে মুরাদ হোসেনের সঙ্গে তার মা ববিতা বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাসিন তার মায়ের সঙ্গে মুরাদের বাড়িতে থাকতেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার বেড়ানোর কথা বলে শিশু তাসিনকে নিয়ে বের হয়ে মোটরসাইকেলে সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে রাতে ফুলবাড়ীর শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের ছড়ারপাড় এলাকায় রাস্তার পাশের পুকুরে ফেলে চলে যান মুরাদ। এদিকে এ সময় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে পুকুরে হাবুডুবু খেতে দেখে তাসিনকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান পার্শ্ববর্তী ফকিরপাড়া গ্রামের আজিপুর ইসলাম। খবর দিলে ফুলবাড়ী থানার পুলিশ রাত ১০টার দিকে শিশুটিকে থানায় নেয়।এদিকে, পালিয়ে যাওয়ার সময় লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট এলাকায় স্থানীয়রা মুরাদকে আটক করে গণধোলাই দেয় এবং পুলিশে সোপর্দ করে।
স্থানীয় রাজ্জাক, স্বপন চন্দ্র ও সাকু মিয়াসহ অনেকেই জানান, যদি পথচারী আজিপুর ইসলাম সাথে সাথে না দেখতেন শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হতো না। বাবা হয়ে এরকম নিষ্ঠুর কাজ যে করতে পারে তার কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত।
পথচারী আজিপুর রহমান বলেন, “আমি বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ দেখি, এক ব্যক্তি শিশুটিকে পুকুরে ফেলে দিয়ে সাইকেল চালিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছেন। শিশুটি তখন ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছিল। আমি আর দেরি না করে পানিতে নেমে তাকে উদ্ধার করি।” এই নিষ্পাপ শিশুটি কি এমন দোষ, তাকে পানিতে ফেলে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। আমি ওই পাষণ্ড বাবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
শিশুটির বড় ভাই বিপ্লব মিয়া (২২) জানান, তাদের বাবা মারা যাওয়ার পর ছোট ভাইকে নিয়ে মা ববিতা বেগম নানার বাড়িতে থাকতেন। প্রায় সাত মাস আগে মায়ের সঙ্গে মুরাদ হোসেনের বিয়ে হয়। এরপর থেকেই তাসিন মায়ের সঙ্গে সৎবাবার ঘরে থাকত। “আমার ছোট ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার চেষ্টা করায় শনিবার রাতে ফুলবাড়ী থানায় মামলা করেছি, তিনি বলেন।
শিশু তাসিনের মা ববিতা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে জানান আমার স্বামী হতে আমি এই নরপশুর দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবিতে জানাচ্ছি।
ফুলবাড়ী থানার দায়িত্বে থাকা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহিম বলেন, শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, মুরাদের স্ত্রী ববিতা বেগম তার ছেলে তাসিনকে নিয়ে সংসার করলেও মুরাদ তাকে মেনে নিতে পারছিলেন না। শিশুটিকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা থেকেই তিনি পুকুরে ফেলে হত্যার চেষ্টা করেছেন। এ ব্যাপারে থানায় একটি হত্যার চেষ্টা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামীকে কুড়িগ্রাম আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।