আব্দুল্লাহ আল আলীম, দেবীদ্বার প্রতিনিধি: কুমিল্লার দেবীদ্বারে গৃহস্থের ঘরে কাজের লোক সেজে ঢুকে সেই ঘরেরই শিশুকে অপহরণ করেছে একটি চক্র। চক্রটি শিশুকে অপহরণের পর দাবীকৃত মুক্তিপণ পাঠানোর বিকাশ নম্বরের সূত্র ধরে চক্রের সদস্য স্বামী-স্ত্রী দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশের একটি দল ঢাকা গাজীপুর নারায়নগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় ২ দিনের অভিযানে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে এ দুজনকে গ্রেফতার করে।অপহরণকারী দলের দুই সদস্য হলেন– মো. কাসেম মিয়া(৪৫) এবং তার স্ত্রী মোসা. সামিয়া বেগম(৩০)। তাদের স্বীকরোক্তির ভিত্তিতে হবিগঞ্জ জেলা থেকে অপহৃত শিশু আব্দুল্লাহ আল মামুনকে (৬) উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার (১৬ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টায় দেবীদ্বার উপজেলার ৯নং গুনাইঘর (উঃ) ইউনিয়নের ছেপাড়া গ্রামের ইদিল সরকার বাড়িতে অপহরণের এ ঘটনাটি ঘটে। অপহৃত শিশু আব্দুল্লাহ আল মামুন ওই বাড়ির আব্দুস সামাদের(৬৩) পঞ্চম সন্তান।
গতকাল রবিবার দুপুরে আটক মো. কাসেম মিয়া ও তার স্ত্রী সামিয়া বেগম এবং উদ্ধার হওয়া শিশু আব্দুল্লাহ আল মামুনকে কুমিল্লা ৪নং আমলী আদালতে হাজির করা হলে, আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ওমর ফারুক ১৬৪ ধারায় তাদের জবানবন্দি নিয়েছেন। আদালতে আসামীরা শিশু আব্দুল্লাহ আল মামুনকে অপহরণ করার দায় স্বীকার করেন। এ সময় শিশু আব্দুল্লাহ আল মামুন অপহরণের ঘটনার বর্ণনা দেন।
অপহরণের ঘটনায় শিশুটির পিতা আব্দুস সামাদ(৬৩) বাদী হয়ে দেবীদ্বার থানায় রবিবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৫ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন– হবিগঞ্জ জেলার আজমিরিগঞ্জ উপজেলার পিটুয়ারকান্দি গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের পুত্র আবুল বাশার(৩৮), আবুল বাশারের স্ত্রী মোসা.ফারজানা আক্তার(৩০), মোসা. ফারজানা আক্তারের বড় বোন ও মৃত: আব্দুর রহিমের মেয়ে আর্জিনা বেগম(৩২), কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার প্রজারকান্দি গ্রামের মৃত। ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে মো. কাসেম মিয়া(৪৫) ও তার স্ত্রী মোসা. সামিয়া বেগম(৩০)। কাসেম মিয়া ও সামিয়া বেগম সম্পর্কে আবুল বাশারের ভগ্নিপতি ও বোন।
মামলার বাদী আব্দুস সামাদ জানান, প্রায় ১০/১২ দিন পূর্বে আবুল বাশার নামে একজন দিনমজুরকে তার বাড়িতে কৃষিকাজ করার জন্য রাখা হয়। দিনমজুর আবুল বাশার এ কয়েকদিনের মধ্যেই তার পরিবারের সদস্যদের আপন হয়ে উঠে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে তার সন্তান আব্দুল্লাহ আল মামুনকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। সাথে দিনমজুর আবুল বাশারও নিখোঁজ হয়ে যায়। সারা রাত খুঁজে না পেয়ে পরদিন শিশুটির বাবা দেবীদ্বার থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী করেন।
এরপরই অপহরণকারী আবুল বাশারের বোন সামিয়া বেগম ও ভগ্নিপতি কাসেম মিয়া তাদের ফোন নম্বর থেকে অপহৃতর পিতা আব্দুস সামাদকে ফোন করে মুক্তিপণ হিসেবে ওই নম্বরে বিকাশে ২০হাজার টাকা পাঠাতে বলেন। এ প্রেক্ষিতে ৩ হাজার টাকা বিকাশে পাঠান এবং বিষয়টি থানা পুলিশকে জানান।
এ ঘটনার পরই দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) নিশান চন্দ্র বল ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসান একদল পুলিশ নিয়ে মোবাইল ট্র্যাকিং করে অভিযান চালান।গাজীপুর টঙ্গী থানা পুলিশের সহযোগীতায় টঙ্গী পূর্ব থানার পাগারবটতলা গ্রামের রোকন মিয়ার ভাড়া বাসা থেকে সামিয়া ও কাসেম মিয়াকে আটক করেন। এসময় প্রধান আসামী আবুল বাশার অপহৃত শিশুকে নিয়ে পালিয়ে যায়।
আটক সামিয়া ও কাসেমকে নিয়ে নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানা এলাকয় আবুল বাশারের শ্বশুরের বাসায় তল্লাসী চালিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তাদের নিয়ে হবিগঞ্জ জেলার আজমিরিগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগীতায় বদলপুর ইউনিয়নের ফিরিজপুর বাজারে অভিযান চালান। এসময় শিশুটি নিয়ে আত্মগোপনে থাকা প্রধান অভিযুক্ত আবুল বাশার, তার স্ত্রী ফারজানা বেগম(৩০) ও তার স্ত্রীর বড় বোন আর্জিনা বেগম(৩২) পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়।
পুলিশ তখন শিশুটিকে মো হেলিম মিয়ার নামক এক স্থানীয় ব্যবসায়ীর চাউলের আড়তের সামনে থেকে উদ্ধার করে।
দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ কমলকৃষ্ণ ধর বলেন, ভিক্টিমের বাবা থানায় মামলা করেছে। পুলিশি অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী দলের ২সদস্য গ্রেফতারসহ ভিক্টিমকে উদ্ধার করে কোর্ট হাজতে চালান করা হয়েছে। আটককৃতরা আদালতে বিচারকের নিকট অপহরণের দায় স্বীকার করেছে।