ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষ উদ্যাপনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তৈরি করা দুটি প্রতীকী মোটিফে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। শনিবার ভোরে এই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস সন্দেহজনক পরিস্থিতির কথা বলেছে, আর অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নেপথ্যে দুষ্কৃতিকারীদের চিহ্নিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, শনিবার ভোর ৫টা ৪ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় তারা। পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৫টা ২২ মিনিট নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে কেবল দুটি মোটিফেই কেন আগুন লেগেছে, তা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা রুহুল আমিন মোল্লা বলেন, “শোভাযাত্রার জন্য বহু মোটিফ প্রস্তুত করা হয়েছিল। তার মধ্যে কেবল দুটি মোটিফে আগুন লাগাটা সন্দেহজনক মনে হচ্ছে।”
আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ মোটিফটি, যা পুরোপুরি পুড়ে যায়। এই মোটিফে একজন নারীর হা-করা মুখ, খাঁড়া শিং, বড় নাক এবং আতঙ্কিত চোখের মাধ্যমে একটি বিকট ও প্রতীকী চেহারা ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল। এটি মূলত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্দেশ করে বানানো হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় যে মোটিফটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটি ছিল ‘শান্তির পায়রা’।
শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর জানান, “কীভাবে এই দুটি মোটিফে আগুন লাগল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।” পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে এবং এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়েছে।
ঘটনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টরসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। চারুকলা অনুষদ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ মোটিফটি কে বা কারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে—এ ঘটনায় তারা দুঃখ প্রকাশ করছে।
এদিকে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে এ ঘটনা। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী শনিবার সকালে ফেসবুকে লেখেন, “হাসিনার দোসররা গতকাল ভোর রাতে চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়ে দিয়েছে। এই দুঃসাহস যারা দেখিয়েছে—সফট আওয়ামী লীগ হোক বা আওয়ামী বি টিম—তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনতে হবে।”
তিনি আরও লেখেন, “শোভাযাত্রা থামানোর চেষ্টায় যারা কাজ করছে, তাদের শুধু আইনের আওতায় আনা নয়—আমরা এবারের শোভাযাত্রাকে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলতে চাই।”
ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলাম বলেন, “এটি পরিকল্পিত কাজ হতে পারে। তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।”
চলতি বছরের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ছিল: ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। সেই ভাবনা থেকেই ২০ ফুট উচ্চতার ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ তৈরি করা হয়েছিল। এর পেছনে ছিল জুলাই-আগস্ট গণ-আন্দোলনের চেতনার প্রতিফলন। ফারুকী তার স্ট্যাটাসে ইঙ্গিত দেন, এই শোভাযাত্রার অন্তর্ভুক্তিমূলক চরিত্রই কারও কারও অসন্তুষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই চাইছেন, প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করে দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।