আব্দুল্লাহ আল আলীম, দেবিদ্বার প্রতিনিধি:
কুমিল্লার দেবিদ্বারে মাদ্রাসার সভাকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের সংঘর্ষে ১ জন নিহত। এ সময় ছুরিকাঘাতে আরও ৪ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষের পরই আহত ৫ জনকে দ্রুত দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে বিকাল সোয়া ৬ টায় দিকে মেহেদী হাসান শান্ত (১৬) নামে একজনকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আহত ৪ জনের মধ্যে ২ জনকে মুমূর্ষু অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
শনিবার(৯ জুলাই) বিকেল সোয়া ৫ টায় দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মেহেদী হাসান শান্ত(১৬) উপজেলার নূরপুর গ্রামের জাকির হোসেন সরকারের ছেলে। পেশায় তিনি ট্রাক্টর চালক ছিলেন।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন, নূরপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল আলম (১৪), তার অবস্থা সংকটপন্ন। সে নূরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র। একই গ্রামের মোতালেব হোসেনের ছেলে রাসেল আহমেদ (২৪), মৃত মাজু মিয়ার পুত্র মো. নুরুল ইসলাম (২৫), খোরশেদ আলমের ছেলে আরমান আলম (১৫)।
স্থানীয় বাসিন্দা বিল্লাল, আকরাম, নাদীম জানান, নূরপুর শাহ ফাতেমি ইবতেদায়ী হাফেজিয়া নূরানী মাদ্রাসা ও এতিমখানায় আজ আসরের নামাজের পর একটি সভা ছিল। সভার পূর্বে নূরপুর গ্রামের আমেরিকা প্রবাসী মো.জসীম উদ্দিনের ছেলে সাজিদের (২৫) সাথে স্থানীয় কয়েকজন কিশোর-যুবকের তর্ক হয়।একপর্যায়ে সাজিদ দাবী করেন, আমার চাচা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা অথচ আমাদের পরিবারের কেউই কমিটির সভাপতি বা সদস্য হতে পারেনা।
এ সময় সাদ্দাম, আল আমিন, সগির, বায়েজিদ সাজিদকে মারতে আসে, সাজিদ কোমর থেকে একটি ছোরা বের করে এলোপাথারি ছুরিকাঘাতে ৩-৪ জনকে আহত করে। সাজিদকে প্রতিপক্ষের লোকজন ঘেড়াও করে মারধর করতে থাকলে সাজিদকে বাঁচাতে তার ভাগিনা মেহেদী হাসান শান্তসহ তার বাড়ির লোকজন এগিয়ে এলে মেহেদী হাসান শান্তকে আল আমিন ও তার লোকজন এলোপাথারি ছুরিকাঘাতে মারাত্মক রক্তাক্ত ও জখম করে। শান্তসহ অপর ৪ জনকে দ্রুত দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার পর সন্ধ্যা ৬টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক শান্তকে মৃত ঘোষণা করে।
নূরপুর শাহ ফাতেমি ইবতেদায়ী হাফেজিয়া নূরানী মাদ্রাসা ও এতিমখানার সভাপতি ও অধ্যক্ষের কাছে ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলেও তারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এ হত্যাকান্ডের পর দুটি বিবাদমান গ্রুপের দ্বন্দ্বের পর এলাকার মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, নিহত শান্ত’র মা হাসপাতালের বারান্দায় সন্তানের শোকে মূহ্যমান। আর মাঝে মাঝে চিৎকার করে বলছে, আমার পুতে কোন ঘটনার সাথে নাই, বাড়ির গাছ থেকে বগার ছাও নামাইয়া আনছে। আমার হাতে দিয়া বলে মা রান্না কইরা রাইখ, আইয়া খামু। তার পর সাজিদের বাড়ি গেছে। একটু পরে খবর পাই আমার পুতেরে মারছে, মেডিকেলে নিয়া গেছে। মেডিকেলে আইসা দেখি আমার পুতে আর নাই।
এ ব্যাপারে ফতেহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম কামরুজ্জামান মাসুদ জানান, আমি এলাকায় গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে যা জানতে পেরেছি। মূলত, আজ বাদ আসর নূরপুর মাদ্রাসায় প্রতিষ্ঠাতা পরিবার ও অধ্যক্ষের মধ্যে চলমান বিবাদ নিরসনে একটি সভা আহ্বান করা হয়। ওই সভাস্থলের কাছে অপেক্ষমান সাজিদের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে আল আমিন, সাদ্দাম, সগির, বায়েজিদ তাকে মারতে আসে। এসময় সাজিদ কোমর থেকে একটি ছোরা বের করে এলোপাথারি ছুরিকাঘাতে ৩/৪ জন আহত করে। অপর দিকে সাজিদকে বাচাঁতে তার ভাগিনা শান্তসহ তার বাড়ির লোকজন এগিয়ে আসলে প্রতিপক্ষের হামলায় শান্ত মারাত্মক জখম হয়। গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডাক্তার শান্তকে মৃত ঘোষণা করে।
দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর রাত পৌনে ১০টায় জানান, ‘আমি ঘটনাস্থল থেকে ঘুরে এসেছি, কেউই সত্য প্রকাশে রাজি হচ্ছেনা। দুটি পক্ষই যার যার মতো বক্তব্য দিচ্ছে। এ কারণে সত্যটা নিরূপনে একটু সময় লাগবে। আরো ব্যাপক তদন্ত ছাড়া সঠিক মন্তব্য করতে পারবোনা।’
তিনি জানান, নিহতের মরদেহ থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তবে কোনো দুইপক্ষের কেউই এখনো মামলা করতে আসেনি।