বর্তমান বাংলাদেশে মিডিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে একটা বড় প্রশ্ন উঠেছে। দেশের মিডিয়া এক বিশাল নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, এবং এই নিয়ন্ত্রণ কেবল সরকারের সঙ্গেই সম্পর্কিত নয়, বরং আওয়ামী লীগের একটি নির্দিষ্ট পরিবার এবং তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে।
এটা এখন বেশিরভাগ মানুষের কাছে স্পষ্ট যে, বিবিসি বাংলা, এপি, ভয়েজ অফ আমেরিকা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক মিডিয়া বাংলায় নিউজের মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পরিবেশন করার ক্ষেত্রে একপেশে এবং পক্ষপাতিত্বমূলক ভূমিকা পালন করছে। এর পেছনে রয়েছে সরকারের শক্তিশালী প্রভাব, যে প্রভাব মিডিয়ার উপর তাদের নিয়ন্ত্রণকে আরও দৃঢ় করেছে। বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মিডিয়া এখন সরকারের বা আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞাপন টাকার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এমনকি দেশের অন্যতম বড় বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভারও সরকারের অধীনে, এবং এই প্রতিষ্ঠানটি এখন একমাত্র ক্ষমতাধর মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।
এটা বলা হচ্ছে যে, দেশের মিডিয়াতে আজকে এক ধরনের মিডিয়া মনোপলি তৈরি হয়েছে, যা শুধু একপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। সরকারের হাত থেকে বড় বড় বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ ও অর্থের মাধ্যমে তারা এই মিডিয়া সাম্রাজ্য চালাচ্ছে। বাংলাদেশের শত শত সাংবাদিক, সম্পাদক, লেখক, আর্টিস্ট, অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং অন্যান্য পেশাদাররা সব সময় এই ক্ষমতার গ্রিপ থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছে, কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি, কারণ তাদের ভবিষ্যত মিডিয়া প্রতিষ্ঠানে কাজ করে কিংবা তাদের হাতে কোনো বেতন পাওয়ার সুযোগ নেই, যদি তারা আওয়ামী পরিবারের বিরাগভাজন হয়ে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে বাংলাদেশের মিডিয়া ল্যান্ডস্কেপে আওয়ামী লীগের তৈরি এই সিস্টেমকে ভেঙে ফেলা। এই কাজটি করার সাহস আর কেউ দেখাতে পারছে না। তবে, যদি কেউ এটি করতে পারে, তারা একদিকে যেমন দেশের মিডিয়া এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে পারবে, তেমনি অন্যদিকে একটি নতুন পরিবেশ সৃষ্টি হবে, যেখানে সবার পক্ষে কাজ করার সুযোগ থাকবে।
অবশেষে, সরকার এবং তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো যদি মিডিয়ায় নিজের প্রভাব কমাতে চায়, তবে তাদের এই শক্তিশালী হাতিয়ার থেকে মুক্তির পথ বের করা জরুরি। সরকার যদি এর বিরুদ্ধে দৃঢ় সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে বাংলাদেশের মিডিয়া দৃশ্যপট কেবল আরো একপেশে হয়ে যাবে, এবং দেশের মানুষ নিজেদের অবস্থা জানতেও পারবে না।
লেখক: শাফকাত রাব্বি
কলামিস্ট