২০১৭ সালে যেখানে বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ, সেখানে বর্তমানে বেকারত্বের হার কমে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) করা জরিপে এ তথ্য উঠে আসে।
আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অডিটোরিয়ামে গতকাল বুধবার (২৯ মার্চ) ‘শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২’ এর খসড়া প্রতিবেদনের ফলাফল প্রকাশ করে। বিবিএস মহাপরিচালক মো: মতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
জরিপে দেখা যায়, দেশে বর্তমানে বেকার আছে ২৬ লাখ ৩০ হাজার। এর আগে ২০১৭ সালের জরিপে যেখানে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। ৫ বছরের ব্যবধানে বেকার কমেছে ৭০ হাজার।
জরিপে দেখা গেছে, ৫ বছর আগের তুলনায় বেকারত্বের হারও কমে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। যা ২০১৭ সালে ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। সপ্তাহে এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করার সুযোগ না পেলে তাঁকে বেকার হিসেবে ধরা হয়।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, এখন দেশে শ্রমশক্তিতে আছেন ৭ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ। এর মধ্যে কাজে নিয়োজিত ৭ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার মানুষ।
শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদনে বিবিএস বলছে, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) দেয়া মানদণ্ড অনুযায়ী সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ না করলে ওই ব্যক্তিকে বেকার হিসেবে ধরা হয়। বর্তমানে মোট বেকারের মধ্যে এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১৬ লাখ ৯০ হাজার জন এবং নারীর সংখ্যা ৯ লাখ ৪০ হাজার জন। আর শ্রমশক্তিতে নিয়োজিত নয় এদের মধ্যে পুরুষ এক কোটি ২০ লাখ ৯০ হাজার, মহিলা ৩ কোটি ৪৮ লাখ ১০ হাজার। যা ২০১৬-১৭ এর রিপোর্ট অনুযায়ী মোট ৪ কোটি ৫৬ লাখ ছিল। এদের মধ্যে পুরুষ এক কোটি ৬০ লাখ এবং মহিলা সাড়ে ৩ কোটি জন ছিল।
করোনায় যেখানে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র সঙ্কুচিত ও বন্ধ হয়েছে, বেকারত্ব বেড়েছে, সেখানে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ বলছে বাংলাদেশে বেকারত্ব কমেছে। কর্মসংস্থান বেড়েছে।
বিবিএস বলছে, সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা ও নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে ঘরে ঘরে চাকরি প্রদানের বিষয়ে বিশেষ সুযোগ তৈরির প্রচেষ্টায় বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, মহামারী করোনাভাইরাসের সময় কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্যের হার কমেছে। সরকার বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেয়ার কারণে কর্মসংস্থান বেড়েছে। করোনার সময় ২০ শতাংশ থেকে দারিদ্র্য কমে ১৬ শতাংশ হয়েছে। সরকার বিলিয়ন ডলার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। আপনারা গভীরে গেলেই বুঝবেন দেশে দারিদ্র্য কমেছে।
এ অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: এহছানে এলাহী এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন।
ড. শামসুল আলম বলেন, করোনাকালে শহর থেকে অনেক মানুষ গ্রামে গেছেন। সেখানে তারা কৃষিতে যুক্ত হয়েছেন। প্রচলিত শস্যের বাইরে শস্য বহুমুখীকরণে ভূমিকা রেখেছেন। তারা ফুল, ফল, মাছসহ নানা বৈচিত্র্যময় চাষে যুক্ত হন। পাশাপাশি যেসব জমি পড়ে ছিল সেগুলো চাষের আওতায় চলে আসে। ফলে কৃষিতে শ্রমশক্তি বেড়েছে। কিন্তু এটা পরবর্তীতে স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ১৫ কোটি ৫০ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয় করে ‘শ্রমশক্তি জরিপ-২০২২’ প্রকল্পের আওতায় এই তথ্য দেয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ এর জুলাই থেকে ২০২৫ এর জুন।