বাংলাদেশ ধর্মান্ধ রাষ্ট্র নয়, এটি সারাবিশ্বে প্রমাণিত উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আমরা ধর্মান্ধ নই বলেই বাংলাদেশের অবস্থা সিরিয়া, ইরাক বা আফগানিস্তানের মতো হয়নি। যদিও উসকানি দিয়ে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চলছে।
দেশের আলেম সমাজকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সফলভাবে দেশের জঙ্গিবাদ দমন করেছে ঠিক। কিন্তু এ বিষয়ে আলেম সমাজ চুপ থাকলে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
রবিবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনস অডিটোরিয়ামে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা অগ্নিসন্ত্রাস দেখেছি। গাড়ি ও বাসাবাড়িতে আগুন দিতে দেখেছি। সেখান থেকে যখনই আমরা কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) করলাম, তখনই শুরু হলো নতুন অধ্যায় জঙ্গিবাদের। ঢাকায় ইতালিয়ান নাগরিক তাভেলা সিজার ও রংপুরে জাপানি নাগরিককে হত্যা করা হলো। পঞ্চগড়ে ইসকন মন্দির ও বান্দরবানের বৌদ্ধ মন্দিরের পুরোহিতকে হত্যা করা হলো। শিয়া মসজিদে হামলা হলো। শোলাকিয়ায় ঈদগাহে হামলা হলো। এর মধ্যেই হলি আর্টিজানে হামলা হলো। এসব ঘটনার পেছনে ছিল বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর পরিকল্পনা। সারা পৃথিবীর মানুষ বিশেষ করে আমেরিকা বলল, বাংলাদেশ শেষ হয়ে গেছে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসাবে দেখানো ও প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, তাদের সে চেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্কতার সঙ্গে তা মোকাবিলা করছে।
কোনো সময়ই ইসলাম জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামে বিনা কারণে গাছের ডাল ভাঙারও বিধান নেই। সেখানে মানুষ হত্যার তো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু জিহাদের নামে যারা মানুষ হত্যা করছে, তাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ধর্মকে পুঁজি করে যারা মানুষ হত্যা করছে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। সে প্রতিরোধ হবে ইন্টেলেকচুয়ালি ও কালচারালি (চিন্তা ও বুদ্ধিভিত্তিক)। তবেই এই রোগ (জঙ্গিবাদ) থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, এখন সোশ্যাল মিডিয়া ও ইউটিউবে প্রচারিত বক্তব্য কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক তা গুলিয়ে ফেলা খুবই সহজ। সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো মডারেটর নেই। কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক সেটা কে নির্ধারণ করবে? স্কলার, মাওলানাদের উচিত এসব বিষয়ে সঠিক বিষয়টি তুলে ধরা।
আইজিপি বলেন, এসব নিয়ে কথা বলতে হবে। জঙ্গি, জিহাদ সম্পর্কে স্কলারদেরই সমাধান দিতে হবে। কিন্তু এখন স্কলারদের মধ্যেও দুটো দল। এক দল বলছে, এসব আয়াত তাৎক্ষণিক পরিস্থিতির জন্য। আরেক দল বলছে, সর্বজনীন। সব সময় প্রয়োগযোগ্য।
পুলিশপ্রধান বলেন, তুষ্টির সুযোগ নেই। এখনও থ্রেট আছে। সারা বিশ্ব থেকে থ্রেট চলে গেলেও বাংলাদেশে থাকবে। কারণ এখানে থ্রেট থাকলেই চাপ তৈরি করা যায়।
অনুষ্ঠানে ‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ গ্রন্থটির সম্পাদনা পরিষদের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের প্রধান ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, বইটি ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে। যাতে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে কেউ জঙ্গিবাদ ছড়াতে না পারে।