সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫

ধর্ম, বিশ্বাস ও সংস্কৃতির আলোকে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেন: প্রধান উপদেষ্টা

-বিজ্ঞাপণ-spot_img

প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নতুন বছরের উৎসব পহেলা বৈশাখকে সবাই যেন নিজেদের ধর্ম, বিশ্বাস ও সংস্কৃতির আলোকে উদযাপন করেন। আমাদের সম্প্রীতি ও মানবিক মূল্যবোধের জয় হোক।

রোববার (১৩ এপ্রিল) সকালে ঢাকার মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে ‘সম্প্রীতি ভবন’ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এই বক্তব্য দেন ইউনূস।

তিনি বলেন, ‘আমি সবসময়ই বলে আসছি, এই দেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষ মিলেমিশে একটি বড় পরিবারের মতোই বসবাস করেন। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে রয়েছে বৈচিত্র্য ও সহাবস্থানের সৌন্দর্য।’

‘আগামীকাল পহেলা বৈশাখ—এটি শুধু একটি বর্ষবরণ উৎসব নয়, বরং আমাদের জাতীয় সম্প্রীতির প্রতীক। সবাইকে নিজ নিজ রীতি ও বিশ্বাস অনুসারে এই দিনটি উদযাপন করার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।

ইউনূস বলেন, ‘বৈশাখের প্রাক্কালে এই ‘সম্প্রীতি ভবন’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার ও বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনকে ধন্যবাদ জানাই। একই সঙ্গে সবাইকে জানাই বাংলা নববর্ষের অগ্রিম শুভেচ্ছা।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এই আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের ধর্মীয় সহাবস্থানের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি শুধু ধর্মচর্চার কেন্দ্র নয়, বরং জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উদ্যোগেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।’

তিনি বলেন, ‘গৌতম বুদ্ধের অহিংসা ও সাম্যের বাণী মেনে দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয়, সামাজিক ও শিক্ষামূলক নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ‘সম্প্রীতি ভবন’ আমাদের এই ঐতিহ্যকে আরও প্রসারিত করবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বাংলাদেশের মানবিক মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করবে।’

ইতিহাসের প্রসঙ্গ টেনে ইউনূস বলেন, ‘এই অঞ্চলের প্রাচীন শিক্ষাকেন্দ্রগুলোর মধ্যে বৌদ্ধ বিহারগুলো অন্যতম। একসময় পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে জ্ঞান অন্বেষণে ভিক্ষু ও ছাত্ররা এখানে আসতেন। এখান থেকেই গৌতম বুদ্ধের শান্তি ও মানবিকতার বাণী ছড়িয়ে পড়ত বিশ্বজুড়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বৌদ্ধ ধর্ম কেবল আচার-অনুষ্ঠান নয়, এটি জনকল্যাণের দর্শনও বহন করে। মহামানব গৌতম বুদ্ধ সবাইকে শান্তি ও সুখে বাঁচতে শিখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কাউকে শান্তি থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়— এমনকি ক্ষুদ্র প্রাণীকেও না।’

বাঙালি বৌদ্ধপণ্ডিত অতীশ দীপঙ্করের অবদান স্মরণ করে ইউনূস বলেন, ‘তিনিও ছিলেন শান্তি ও জ্ঞানের দূত। তিনি তিব্বতসহ নানা অঞ্চলে মহামানব বুদ্ধের বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। আজও চীনে তাকে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জানানো হয়।’

সম্প্রীতি, শান্তি ও মানবিকতাই হোক নতুন বছরের বার্তা—এমন আশাই ব্যক্ত করেছেন নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ।

শেয়ার করুন

সর্বশেষ নিউজ

ফ্যাসিবাদী মুখাকৃতি সামনে রেখে শেষ হলো বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন নিয়ে সকাল থেকেই রমনার বটমূল ছিল নানা আয়োজনে মুখরিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের আয়োজনে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত...

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণে নানা আয়োজন, অনুষ্ঠিত হলো শোভাযাত্রা

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে সারাদেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো বর্ষবরণের আনন্দে মেতে উঠেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। সকালে বর্ষবরণে উদযাপনে অনুষ্ঠিত হয়েছে 'আনন্দ শোভাযাত্রা’।   সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল...

চারুকলা থেকে বের হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’, অংশ নিয়েছে ২৮টি জাতিগোষ্ঠী

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হয়েছে। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে শোভাযাত্রাটি বের হয়। শোভাযাত্রাটি...

বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক এবারের নববর্ষের অঙ্গীকার: প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান আমাদের সামনে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার সুযোগ এনে দিয়েছে। এ সুযোগ যেন আমরা...

সম্পর্কিত নিউজ

ফ্যাসিবাদী মুখাকৃতি সামনে রেখে শেষ হলো বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন নিয়ে সকাল থেকেই রমনার বটমূল ছিল নানা আয়োজনে মুখরিত। ঢাকা...

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণে নানা আয়োজন, অনুষ্ঠিত হলো শোভাযাত্রা

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে সারাদেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো বর্ষবরণের আনন্দে মেতে উঠেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।...

চারুকলা থেকে বের হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’, অংশ নিয়েছে ২৮টি জাতিগোষ্ঠী

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা...