আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নতুন মুখ দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বর্তমান সভানেত্রী ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। নিজের সময় শেষ হয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামীলীগের একজন কাউন্সিলরও না চাইলে দলের নেতৃত্বে থাকবো না। আমি চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক। আমার তো সময় শেষ হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, ২০০৮ থেকে শুরু করে ২০২২ পর্যন্ত এই প্রথম গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। আমরা ক্ষমতায় ছিলাম বলে আমরা উন্নত দেশে উন্নীত হয়েছি। সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এখন আমি বিদায় নিতে প্রস্তুত।
আজ বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিকাল ৪টায় যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ দিনের সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০২৩ সালটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বছর। সামনে একটি দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। জনগণের সমর্থন ছিল বলে প্রত্যেকটা সংকট আমরা মোকাবেলা করতে পেরেছি। করোনা পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশনের মাঝেও আমরা অর্থনীতি পরিস্থিতিকে ঠিক রাখতে পেরেছি। কোন দুর্যোগ দেখা দিলে সমস্যা নেই। কারণ আমাদের পাঁচ মাসের রিজার্ভ আছে। আমরা ঋণগুলো সময় মত পরিশোধ করি।
প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা হিসেব করে দেখি যে, সেটা আমাদের দেশের জন্য কতটুকু প্রযোজ্য। কেউ একটা প্রস্তাব নিয়ে আসলেই আমরা সেটাতে ঝাঁপিয়ে পড়ি না। যেটাতে ভালো রিটার্ন পাবো সেটাই আমরা গ্রহণ করি, বাকিগুলো করি না। আমরা বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। কিন্তু আমাদের কিছু কিছু পত্রিকা আছে যারা সব সময় নেতিবাচক চিন্তা এবং পরশ্রীকাতরতায় ভোগে। তবে সেটা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই। আমার একটা লক্ষ্য থাকে যে, জনগণের উপর আমার আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। জনগণের যেন কষ্ট না হয় সেদিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দেই।
তবে এই পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলে মিলে যদি এই চিন্তা করি যে, দেশটা আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যদিও আন্দোলনের হুমকি-ধামকি অনেক কিছুই পাওয়া যাচ্ছে। সেটা তো বিরোধীদলের কাজ। কিন্তু আমরা এতোটুকু বলবো, যে কোন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোন রিক্স নেই। আমাদের ফরেন কারেন্সির রিজার্ভ নিয়েও কোন দুশ্চিন্তা নেই। মাত্র এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম ১৯৯৬ সালে।
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়া উল্লেখ করে তিনি বলে, স্যাংশনে দেশের ক্ষতি হচ্ছে, সাধারণ মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। কথায় কথায় নিষেধাজ্ঞা দেবে এটা কেমন কথা? তিনি বলেন, যুদ্ধ করে অস্ত্র প্রস্তুতকারীরা লাভবান হবে আর আমাদের দেশের মতো লোকেরা না খেয়ে মরবে-এটা তো হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব জায়গায় নারী নেতৃত্বের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন ছাড়া উন্নত দেশ গড়া সম্ভব না। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যা বিশ্ব নেতাদেরকে অবহিত করেছি। গৃহহীন ও ভূমিহীন জনগণের জন্য গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্প, গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নের জন্য আমার গ্রাম আমার শহর এবং ঘরে ফেরা প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বহু ভূমিহীন মানুষের আবাসন নিশ্চিত হয়েছে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে তিনি বলেন, আমরা চাই, সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। কার কোথায় কতটুকু যোগ্যতা আছে সেটা প্রমাণ হোক। এরপরও যদি কেউ না আসে তবে আমাদের কি করার আছে? অগ্নি সন্ত্রাস করে যারা মানুষ হত্যা করেছে তাদেরকে কি মানুষ ভোট দেবে?
তিনি আরো বলেন, জনগণের কাজ করে জনগণের মনোনয়ন নিয়েই আওয়ামী লীগ বার বার ক্ষমতায় এসেছে। ইমারজেন্সি দিয়ে বা কারো ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসেনি। আওয়ামী লীগ যতবার এসেছে ততবার নির্বাচনের মাধ্যমেই এসেছে, ভোটের মাধ্যমেই এসেছে। বাংলাদেশের একটি মাত্র দল যারা আমরা আমাদের গঠনতন্ত্র মেনে চলি।।