প্রায় ২০ বছর ধরে নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ এলাকার মেঘনা নদীর একটা নির্দিষ্ট জায়গায় মাছ ধরতেন মো. আলাউদ্দিন মাঝি (৪৫)। অন্য কোনো জেলে সেখানে জাল ফেলতেন না। এটা জেলেদের মধ্যে একধরনের অলিখিত সমঝোতা। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর নদীর ওই অংশে তিনি মাছ ধরতে পারছেন না। স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের লোকজন তার মাছ ধরার জায়গাটি দখলের পর সেখানে তাকে যেতে দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন আলাউদ্দিন।
শুধু আলাউদ্দিন মাঝিই নন, নিঝুম দ্বীপের এমন অনেক জেলেই এখন নদীতে মাছ ধরতে নামতে পারছেন না হামলার ভয়ে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সীমাহীন কষ্টে পড়েছেন তারা। কথা হয় এমনই আরেক জেলে বেলাল মাঝির সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ৩০ বছর ধরে নদীতে মাছ ধরেন একটি নির্দিষ্ট এলাকায়। গত ১১ জানুয়ারি তার নৌকায় হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা তার নৌকায় থাকা লোকজনকে পিটিয়ে আহত করেন। এরপর বলা হয়, ওই এলাকায় মাছ ধরতে হলে দুই লাখ টাকা দিতে হবে।
নিঝুম দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিঝুম দ্বীপের আশপাশের মেঘনা নদীর যেসব এলাকায় বেশি মাছ পাওয়া যায়, সেসব এলাকায় স্থানীয় জেলেরা পরস্পরের সমঝোতার ভিত্তিতে মাছ ধরেন। সেখানে তারা জাল বসান। নদীর ওই সব উর্বর এলাকা জেলেদের কাছে ‘হার’ নামে পরিচিত। স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের নেতারা এখন নদীর হার দখল করছেন বলে জেলেরা অভিযোগ করেন। দখল করা এই জায়গা অন্য জেলেদের কাছে বিক্রি করছেন বিএনপি–যুবদলের নেতারা।
জেলেদের অভিযোগ, ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মো. আশরাফ, তার ভাই মো. আনছার মাঝি, ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ মেম্বার, ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. ইব্রাহিম মাঝি নদী দখল ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত।
নদী দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেন ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক মো. আশরাফ। তিনি বলেন, এত বছর আওয়ামী লীগ ছিল ক্ষমতায়। আগে বিএনপির সমর্থক মাঝিরা নদীতে মাছ ধরতে পারেননি। এমন জেলেদের তারা মাপজোখ করে নদীর অংশ বুঝিয়ে দিয়েছেন। নদী কেনাবেচা হয়েছে কি না, তিনি জানেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জেলে বলেন, তারা কেউ এক যুগের বেশি, কেউ দুই যুগের বেশি সময় ধরে নিজেদের মতো করে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় (হার) জাল বসিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। অতীতে কখনো নদীতে জেলেদের হার দখল কিংবা দখল করে বেচাকেনার ঘটনা ঘটেনি। হামলা ও হয়রানির ভয়ে জেলেদের কেউ বিষয়টি নিয়ে আইনের আশ্রয় নিতেও সাহস পাচ্ছেন না।
নদীর হার বিক্রির বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি মো. সাহেদ উদ্দিন বলেন, যারা নদী ( হার) বিক্রি করার, তারা করছেন। এমন অভিযোগ কারও বিরুদ্ধে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তিনি এ ধরনের কোনো কাজে জড়িত নন।
বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হাতিয়া উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মোজাম্মেল হোসেন ওরফে আজাদ শনিবার দুপুরে বলেন, নিঝুম দ্বীপের মেঘনায় মাছ ধরার হার দখল ও বেচাকেনার বিষয়টি সম্পর্কে তিনি জেনেছেন। বিষয়টি দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদেরও অবহিত করা হয়েছে। শিগগিরই এ ঘটনায় ইউনিয়ন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।