কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাইয়ের জন্য মিয়ানমার থেকে আসা মিয়ানমার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদলের সদস্যদের অনেক রোহিঙ্গা নারী–পুরুষ বলেছেন, তাদের ফিরিয়ে নিতে হলে নাগরিকত্ব দিতে হবে। নাগরিকত্ব না পেলে তাঁরা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন না। গতকাল বুধবার রাত পৌনে আটটা পর্যন্ত ২৯ পরিবারের ৯৩ জন রোহিঙ্গা নারী–পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলটি।
গতকাল বুধবার (১৫ মার্চ) সকালে ২২ সদস্যের মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলটি মিয়ানমারের মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্সের মংডুর আঞ্চলিক পরিচালক অং মাইউ এর নেতৃত্বে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর থেকে নৌযানে নাফ নদী অতিক্রম করে টেকনাফ পৌঁছান। টেকনাফে দলটিকে অভ্যর্থনা জানান কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মুহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা।
এরপর আজ বেলা ১১টার দিকে টেকনাফ স্থলবন্দরের অভ্যন্তরে মালঞ্চ সম্মেলনকক্ষে মিয়ানমার প্রতিনিধিদল ও বাংলাদেশের একটি দলের যৌথ উদ্যোগে কক্সবাজারের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার এবং তথ্য যাছাই কার্যক্রম শুরু হয়।
মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা রোহিঙ্গা হোসেন জোহার জানান, তাঁরা যে মিয়ানমারের নাগরিক, এর সপক্ষে অনেক তথ্য যাছাই-বাছাই হয়েছে। সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। জানিয়ে এসেছেন, শুধু তথ্য যাছাই-বাছাই করলে হবে না, তাঁদের ফিরিয়ে নিতে হলে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দিতে হবে। না হলে রাখাইন রাজ্যে ফিরে যাবেন না।
হোসেন জোহার গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে উখিয়ার আশ্রয়শিবির থেকে তিনি দুই স্ত্রী ও ১৭ ছেলেমেয়ে নিয়ে ভাসানচর আশ্রয় শিবিরে ঠাঁই নেন। মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য দুই দিন আগে তাঁদের ভাসানচর থেকে টেকনাফে আনা হয়।
আরআরআরসি কার্যালয় সূত্র জানায়, চীনের মধ্যস্থতায় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তখন প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ থেকে যে আট লাখ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছিল, এর থেকে প্রথম ধাপে ১ হাজার ১৪০ জনকে নেওয়ার জন্য কথা বলা হয়েছিল।
এ তালিকার ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সম্মতি পাওয়া গেলেও অবশিষ্ট ৪২৯ জনের বিষয়ে মিয়ানমারের আপত্তি ছিল। বাংলাদেশ সরকারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে, মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলটি টেকনাফে এসেছে ৪২৯ জন রোহিঙ্গার তথ্য যাছাইয়ে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান তথ্য যাছাইয়ের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে জানিয়ে বলেন, প্রতিনিধিদলটি টেকনাফ এসেছে মূলত প্রথম ধাপে প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকাভুক্ত ৪২৯ জন রোহিঙ্গার তথ্য যাছাই–বাছাই করতে। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত এসব রোহিঙ্গা পরিবারে জন্ম নেওয়া শিশুদেরও ডেটাবেজ তৈরি করছে দলটি। প্রতিদিন ৬০ থেকে ১০০ জন রোহিঙ্গার তথ্য যাছাই করা হবে। এ ক্ষেত্রে ৪২৯ জনের তথ্য যাছাই করতে পাঁচ-ছয় দিন সময় লেগে যেতে পারে। তত দিন মিয়ানমার দলটি টেকনাফে অবস্থান করবে।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে আট লাখ এসেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর নিপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর।