নাটোর আদালত চত্বরে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর সাবেক এসপি এস.এম ফজলুল হকের হামলা এবং সিংড়ায় তথ্য চাওয়ায় ডেভিল হান্টের নামে সমকালের সাংবাদিক আব্দুর রশিদকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন নাটোরের সাতটি উপজেলার গণমাধ্যমকর্মী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ সচেতন নাগরিকেরা।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় তারা। সেখানে বিক্ষোভ শেষে পুনরায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এসে সমবেত হয়। প্রায় তিনঘন্টাব্যাপী সেখানে অবস্থান করে সাংবাদিকরা।
এ সময় সাংবাদিকরা সিংড়া থানার ওসি, ইউএনও’ ও উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানান। সেই সাথে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারী বরখাস্তকৃত পুলিশ সুপার ফজলুল হকের শাস্তি দাবী করেন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন।
এর আগে, গত মঙ্গলবার দুপুরে বরখাস্তকৃত পুলিশ সুপার ফজলুল হক স্ত্রী নির্যাতন মামলায় আদালতে হাজির হলে তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় বিচারক। পরে তাকে কারাগারে নেবার সময় পুলিশের কাছ থেকে ছুটে সাংবাদিকদের উপর হামলা ও ক্যামেরা ভাংচুরের চেষ্টা চালায় ফজলুল হক।
এদিকে, বুধবার সন্ধ্যায় সমকালের সিংড়া প্রতিনিধি আব্দুর রশিদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সিংড়া ইউএনও অফিসে খাস পুকুরের তথ্য চেয়ে আবেদন করায় তাকে ডেভিল হান্টের নামে গ্রেফতারের নাটক সাজায় বলে অভিযোগ করেন গণমাধ্যমকর্মীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিক রশিদকে আদালতে হাজির করলে তার জামিন মঞ্জুর করে আদালত।
অবস্থান কর্মসূচিতে নাটোর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র করেসপনডেন্ট নাজমুল হাসান জানান, সিংড়ার ইউএনও এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসাদ আলী মোল্লার অনিয়ম ও দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে বুধবার সন্ধ্যায় সমকালের সিংড়া প্রতিনিধি আব্দুর রশিদকে আটক করে সিংড়া থানা পুলিশ।
তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাওয়াটাই কি তার অপরাধ এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সারাদেশব্যাপী সাংবাদিকদের প্রতি যে দমন পীড়ন তারই অংশ হিসাবে সাংবাদিক রশিদকে আটক করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেই সাথে একজন বরখাস্তকৃত এসপি ফজলুল হক আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের উপর হামলা করেছে তার শাস্তি দাবী করছি।
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও একাত্তর টেলিভিশনের নাটোর প্রতিনিধি বুলবুল আহমেদ বলেন, তথ্য চাওয়ায় একজন মূলধারার গণমাধ্যমকর্মীকে প্রশাসন কৌশল করে গ্রেপ্তার করিয়েছে। একজন সাংবাদিককে ডেভিল আখ্যায়িত করেছে এই পুলিশ। তাদের ঔদ্ধত্য কতটুকু একবার চিন্তা করেন। অথচ সবচেয়ে বড় ডেভিল হচ্ছে সিংড়ার ওসি এবং ইউএনও।
তিনি বলেন, সকল সেক্টরের অনিয়ম দুর্নীতি সয়লাব হয়ে গিয়েছে। তারা সেগুলো নির্মূল না করে নিজেরাই দুর্নীতির সাথে জড়িত হয়ে সকল অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। আমরা হুশিয়ারি করে বলে দিতে চাই। আপনারা নাটোরে পুলিশ- প্রশাসন কি সাংবাদিকদের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। যদি তাই করেন, আমরাও তা মোকাবেলা করতে প্রস্তুত রয়েছি।
সমকালের নাটোর প্রতিনিধি নবীউর রহমান পিপলু বলেন, সাংবাদিক উপর দমন পীড়নের চেষ্টা করা হলে তা সম্মিলিতভাবেই প্রতিহত করা হবে।