নেত্রকোনার গুমাই নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন এখন ওপেন সিক্রেট। মাত্র ৫৫০ টাকায় গুমাই নদীর বালুমহালের খাজনার রশিদ কিনে একটি চক্র নিয়মিতভাবে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। এ চক্র নদীর নির্ধারিত ইজারা এলাকাকে পাশ কাটিয়ে দূরবর্তী কৃষিজমি, খাল-বিল, নালা ও সংবেদনশীল নদী তীর অঞ্চল থেকে বালু উত্তোলন করছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট মহল সরকার নির্ধারিত বালুমহালের সীমা না মেনে প্রভাব খাটিয়ে এলাকাজুড়ে বালু তোলার মহোৎসবে মেতে উঠেছে। তারা মূলত একটি সস্তা রশিদ সংগ্রহ করে সেটিকে বৈধতার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। অথচ উত্তোলন হচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন এলাকা থেকে—যেখানে কোন অনুমোদন নেই, নেই পরিবেশগত ছাড়পত্র কিংবা সরকারি ইজারা।
এই পদ্ধতিতে তারা দিনরাত ট্রাকভর্তি বালু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ঢাকাসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে চলে যাচ্ছে এসব বালু। অথচ সরকার পাচ্ছে মাত্র ৫৫০ টাকার বিনিময়ে একটি রশিদের রাজস্ব, যেখানে একেক ট্রাক বালু বিক্রি হচ্ছে হাজার হাজার টাকায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে নদীর প্রকৃতি ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। কৃষিজমি ধসে পড়ছে, খাল-বিলের প্রাকৃতিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এবং অনেক গ্রামে পানি নিষ্কাশনের পথ অবরুদ্ধ হচ্ছে। নদীর গভীরতা বাড়ায় আশপাশের ঘরবাড়ি ও জমি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কৃষক জানান, ”বালু উত্তোলনের জন্য আমাদের জমির পাশের খাল কেটে ফেলেছে। এখন বর্ষায় পানি জমে থাকে, ধান চাষ করা যায় না। অথচ প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।”
স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। অভিযোগ রয়েছে, নিরব থাকায় অথবা মদদ দেওয়ায় এই অবৈধ ব্যবসা এতদূর গড়িয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো দৃশ্যমান অভিযান চালাচ্ছে না।
আরেক সচেতন নাগরিক জানান, ”অভিযান হয় কেবল মাঝেমধ্যে, তাও লোক দেখানো। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আবার আগের মতো বালু উত্তোলন শুরু হয়।”
পরিবেশবিদ ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই ধরনের অবৈধ বালু ব্যবসা শুধু সরকারের রাজস্ব ক্ষতির জন্যই নয়, দীর্ঘমেয়াদে নদীর গতিপথ পরিবর্তন, ভূমিধস এবং কৃষি উৎপাদন হ্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এই এলাকাগুলো মারাত্মক পরিবেশগত সংকটে পড়বে।
এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজের দাবি, দ্রুত এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে প্রকৃত দোষীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি ঘুমাই নদীসহ নেত্রকোণার অন্যান্য নদী ও জলাশয় রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।