মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫

নির্বাচন যত দেরি হবে, বাংলাদেশ তত পিছিয়ে যাবে: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
-বিজ্ঞাপণ-spot_img

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নেতা-কর্মীদের মানুষের কাছে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন। সেই নির্বাচনের প্রস্তুতি কী? মানুষের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি করেন। বিএনপিকে যেন মানুষ ভালোবাসে। বলে, “হ্যাঁ, বিএনপি ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নাই।” এই জিনিসটাকে আমাদের তৈরি করতে হবে। সেই জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।’

সোমবার দুপুরে সিলেট নগরের পাঠানটুলা এলাকার সানরাইজ কমিউনিটি সেন্টারে জেলা ও মহানগর বিএনপির ব্যবস্থাপনায় এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিকের উদ্যোগে দোয়া ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফিরাত কামনায় এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় এ দোয়া মাহফিল হয়। পাশপাশি আলোচনা সভাও হয়েছে।

দোয়া ও আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ (টুকু) ও এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি আমাদের নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে কথা বলে ছাব্বিশের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচনের একটা সময় ঠিক করেছেন।’ এরপর বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘পরিষ্কার করে বলতে চাই, সরকারকে বলতে চাই, অন্য রাজনৈতিক দলকে বলতে চাই, নির্বাচন যত দেরি হবে, তত বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে।’

দ্রুত নির্বাচন না হলে বিভিন্ন সংকট দেখা দেবে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বিনিয়োগ আসবে না। ইনভেস্টমেন্ট (বিনিয়োগ) হবে না। আমার মায়েরা–মেয়েরা আরও বেশি নিরাপত্তা হারাবে। মবোক্রেসি আরও বাড়বে। জুডিশিয়াল সিস্টেম ভেঙে পড়বে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়বে। সে জন্য দরকার একটি নির্বাচিত সরকার। যে সরকারের পেছনে মানুষ আছে, সে সরকারের পেছনে জনসমর্থন আছে। নির্বাচিত সরকারের চাইতে শক্তিশালী কোনো সরকার হতে পারে না।’

দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যেন খারাপ কথা কেউ বলতে না পারে। আমাদের দিকে আঙুল তুলে যাতে বলতে না পারে যে আমরা খারাপ কাজ করছি, কারও জমি দখল করেছি, রাস্তা দখল করেছি, চাঁদাবাজি করেছি। এ কথা যেন কেউ না বলতে পারে। সবাইকে আমাদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।’

২০২৪ এবং এর আগের ১৫ বছর গণতন্ত্রের জন্য অনেকে বুকের রক্ত রাস্তায় ঢেলে দিয়েছিলেন উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। আমাদের নেতা যারা এখানে বসে আছেন, তাদের অনেককে পায়ে-হাতে দড়ি লাগিয়ে মাসের পর মাস কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে এই সিলেটে। অনেককে পিটিয়ে পিটিয়ে শরীর জর্জর করেছে হাসিনা সরকার। হাতে-পায়ে বেড়ি দিয়ে আটকে রাখত। এই অত্যাচার–নির্যাতন সহ্য করে আমরা এখন এখানে।’

শেখ হাসিনা এমনি এমনি হঠাৎ পালাননি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বহুদিনের সংগ্রাম, বহু মানুষের ত্যাগ স্বীকার, বহু মানুষের রক্ত, বহু মাতার কান্না—সব মিলিয়ে এই ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছি। এখন ফ্যাসিবাদমুক্ত হলাম, ঠিক আছে। এখন করবটা কী? আমরা তো বলেছি, আমাদের এই লড়াইটা হচ্ছে গণতন্ত্রের লড়াই। অর্থাৎ আমরা বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যেখানে সবার অধিকার পূর্ণ করা হবে। ভোট দিতে পারবে মানুষ, যেখানে কথা বলতে পারবে, বাক্‌স্বাধীনতা থাকবে।’

বাংলাদেশ কি চিরকাল দরিদ্র দেশ হয়ে থাকবে? চিরকাল নিচে পড়ে থাকবে? এসব প্রশ্ন রেখে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সেই বাংলাদেশ দেখতে চাই, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেখেছিলেন। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে তিনি খাল কেটেছিলেন গ্রামে গ্রামে গিয়ে। সে বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই, যে বাংলাদেশের জন্য আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া গ্রামে-গ্রামান্তরে চারণকবির মতো গণতন্ত্রের গান গেয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করেছিলেন। আমরা সেই স্বপ্ন দেখতে চাই।’

সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান (হাবিব), খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, তাহাসিনা রুশদীর (লুনা), এনামুল হক চৌধুরী, আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এর আগে, সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে ঢাকা থেকে সিলেটগামী একটি ফ্লাইটে মির্জা ফখরুল সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। সেখান থেকে তিনি হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত শেষে পাঠানটুলা এলাকার সভাস্থলে যান। এ সভা শেষে বিকেলে নগরের দরগাগেট এলাকার একটি হোটেলে সিলেট জেলা বিএনপি আয়োজিত জুলাই-আগস্টে সিলেট জেলায় শহীদ বীর সন্তানদের বিশেষ স্মরণ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

সম্মাননা অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী। বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ (টুকু), এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির প্রমুখ।

শেয়ার করুন

সর্বশেষ নিউজ

ব্রেন স্ট্রোক করে ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২২-২৩ সেশনের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আহসানুর রহমান (২২) ব্রেন স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেছেন। সোমবার (৭ জুলাই) রাত ৯ টা ৪০ মিনিটে...

বাংলাদেশিদের জন্য নতুন ধরনের গোল্ডেন ভিসা চালু করলো আমিরাত

পেশাজীবীদের জন্য নিজেদের আবাসন কর্মসূচির শর্ত শিথিল করে নতুন ধরনের গোল্ডেন ভিসা চালুর ঘোষণা দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। পাইলট প্রকল্প হিসেবে...

আনিসুল, হাওলাদার ও চুন্নুকে জাপা থেকে অব্যাহতি

জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ বিরোধ আবারও প্রকাশ্যে এসেছে। শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে দলের মহাসচিব করার পর দলের জ্যেষ্ঠ তিন নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম...

এডহক কমিটির সভাপতির অপসারণ দাবিতে ঝালকাঠিতে মানববন্ধন

ঝালকাঠির রাজাপুরে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। সোমবার (৭ জুলাই) সকালে রাজাপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ...

সম্পর্কিত নিউজ

ব্রেন স্ট্রোক করে ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২২-২৩ সেশনের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আহসানুর রহমান (২২) ব্রেন স্ট্রোক...

বাংলাদেশিদের জন্য নতুন ধরনের গোল্ডেন ভিসা চালু করলো আমিরাত

পেশাজীবীদের জন্য নিজেদের আবাসন কর্মসূচির শর্ত শিথিল করে নতুন ধরনের গোল্ডেন ভিসা চালুর ঘোষণা...

আনিসুল, হাওলাদার ও চুন্নুকে জাপা থেকে অব্যাহতি

জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ বিরোধ আবারও প্রকাশ্যে এসেছে। শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে দলের মহাসচিব করার পর...