সম্প্রতি দেশের বাইরে গিয়ে নুর ইসরাইলের লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের তরুণ রাজনীতিবিদ, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণপরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক। তাদের দুজনের এক ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার শুরু হয়। অনেকের মতে নির্বাচন সামনে রেখেই এমন একজনের দ্বারস্থ হয়েছেন নবীন এই রাজনীতিবিদ।
প্রথমদিকে ছবির বিষয়ে অস্বীকার করলেও শেষ অব্দি নিজের অবস্থান বদল করেন একসময়ের জনপ্রিয় এই ছাত্রনেতা। ফেসবুক লাইভে এসে তিনি বলেন, ‘সাফাদির সঙ্গে দেখা হয়েছে তো কী হয়েছে?’ এ সময় নিজের বৈঠকের পক্ষে সাফাই দেয়ার জন্য সরকার উৎখাত ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ২০১৬ সালে গ্রেফতার হওয়া বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর প্রসঙ্গ টেনে আনেন নুর।
দেশের এক তরুণ রাজনীতিবিদের সাথে ইসরায়েলের ক্ষমতাবান দলের একজনের বৈঠক নিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান।
গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, একজন ‘গণতন্ত্রকামী’ নেতা হিসেবে নুরের এমন আচরণ বাংলাদেশের ৯০ ভাগ জনগণের মতের বিরুদ্ধে যায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব লাভের পর থেকে ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে এসেছে। এ দেশের ৯০ ভাগেরও বেশি মানুষ ফিলিস্তিনকে সমর্থন করছে। এই ৯০ শতাংশ মানুষের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে কেউ তো গণতন্ত্রের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না।
রামাদান বাংলাদেশের মানুষের ওপর আস্থা রেখে বলেন, ‘এ দেশের মানুষ ও সরকার সবসময় আমাদের সঙ্গে ছিল। একটি ন্যায়ের সঙ্গে ছিল। ভবিষ্যতেও থাকবে বলে আমাদের আস্থা রয়েছে।’
ফেসবুক লাইভে নিজের আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেয়া নুরের বক্তব্য প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘প্রথমত এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাদের সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের ওপর। আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। এ বিষয়ে যেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, তারা সেটাই করবে বলে আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। নির্বাচনের আগে পরিবেশ উত্তপ্ত অবস্থায় থাকায় কিছু ব্যক্তি এটাকে ব্যবহারের চেষ্টা করছেন। আমরাও এটা বুঝতে পারি। তবে বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেক স্মার্ট। বাংলাদেশের জনগণ, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। তারাই এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’
এসময় ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রামাদান মেন্দি এন সাফাদি সম্পর্কে বলেন: প্রথমত, তার নাম মেন্দি সাফাদি নয়। তার আসল নাম মুনজের সাফাদি। তিনি গুলেন হায়েস্তের একজন সিরিয়ান। যেটা ১৯৬৫ সালে ইসরাইল দখল করে। এই ব্যক্তি মোসাদকে সহায়তা করে, যে কারণে তার মা-বাবা, ভাই-বোন সাফাদিকে ত্যাগ করে এবং পরিবার থেকে বিতাড়িত করে। ফলে সে গুলেন হায়েস্ত ছেড়ে তেল আবিবে যায় ও সেখানে শিক্ষাজীবন শেষে মোসাদে যোগ দেয়।
মেন্দি এন সাফাদিকে একজন বিশ্বাসঘাতক উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ইউসুফ রামাদান বলেন, এমন চরিত্রের (বিশ্বাসঘাতক) একজন মানুষের সঙ্গে দেখা করে কেউ যদি বড় কিছু হয়ে যেতে চায়, এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। যদি কেউ মনে করে এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার মাধ্যমে সে বড় রাজনীতিবিদ হয়ে যাবে, এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। তবে যখন এ দেশের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ আমাদের পাশে আছে, তখন কোন্ ব্যক্তি কোথায় কার সঙ্গে মিটিং করল তাতে আমাদের কিছু যায়-আসে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাব তাদের সমর্থনের জন্য। আমরা কখনোই ভুলে যাব না। আমাদের সন্তানরাও মনে রাখবে। এই দেশের মানুষ, দেশের সরকার কীভাবে আমাদের পাশে ছিল। সব আন্তর্জাতিক ফোরামে যেখানেই সমর্থন দরকার হয়েছে, বাংলাদেশ সবসময় ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিয়েছে। ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ যখনই এসেছে, বাংলাদেশ সর্বপ্রথম আমাদের পক্ষে তার ভোটটি দিয়েছে। এ সবই ফিলিস্তিনের ইতিহাসে লেখা থাকবে।’