নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পেরিয়ে গেলেও খেলাধুলার সুবিধা এখনো শূন্যের কোটায়। বিশেষ করে আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো কার্যকর খেলাধুলার অবকাঠামো নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরুষদের দুটি আবাসিক হল- বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক উকিল হল এবং ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলে এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী থাকলেও তাদের জন্য নেই কোনো ইনডোর বা আউটডোর খেলার সঠিক ব্যবস্থা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গত এক দশকে নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে নতুন ভবন, সড়ক ও নানা অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও খেলাধুলা ও বিনোদনের জায়গায় কোনো অগ্রগতি হয়নি। অথচ ১০ হাজার শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক প্রশান্তি ও শারীরিক সুস্থতার জন্য ইনডোর গেমস রুম, জিমনেসিয়াম কিংবা খেলাধুলার মাঠ অপরিহার্য। কিন্তু এ ধরনের কোনো স্থায়ী উদ্যোগ নেই। ফলে অবসর সময় কাটানো কিংবা একাডেমিক চাপ থেকে মুক্তির সুযোগ হারাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
২০২৩ সালের অক্টোবরে আবদুল মালেক উকিল হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামাল স্মৃতি খেলাঘরের উদ্বোধন করে। সেখানে দাবা, ক্যারম, টেবিল টেনিসসহ নানা ইনডোর গেমস চালুর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু উদ্বোধনের কয়েক মাসের মধ্যেই অব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সব সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে সেটি একেবারেই খেলার অযোগ্য অবস্থায় পড়ে আছে।
অন্যদিকে, ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলে পরিস্থিতি আরও হতাশাজনক। একাধিকবার খেলাঘর স্থাপনের আশ্বাস দিলেও ১৯ বছরেও কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। ছয় মাস আগে ডাইনিংয়ের পাশে খেলাঘরের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হলেও এখনো সেখানে খেলাধুলার কোনো সরঞ্জাম আসেনি। বরং জায়গাটি ডাইনিংয়ের লাকড়ি রাখার স্থান হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, খেলাধুলার সুযোগ না থাকায় তারা বিভিন্ন আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না। নিয়মিত অনুশীলনের সুযোগ না থাকায় প্রতিভাবান খেলোয়াড়রাও হারিয়ে যাচ্ছেন। শুধু পড়াশোনা নয়, খেলাধুলা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক বন্ধন ও দলগত চেতনা গড়ে তোলে। কিন্তু নোবিপ্রবির ১৯ বছরে এই ক্ষেত্রটিতে অবহেলা স্পষ্ট।
ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলের শিক্ষার্থী শাকিল উদ্দিন বলেন, “হলের নিচতলায় দাবা বা টেবিল টেনিসের মতো ক্ষুদ্র কোনো খেলাধুলার ব্যবস্থাও নেই। ক্যারম বোর্ড থাকলেও প্রয়োজনীয় গুটি পাওয়া যায় না। ফলে অবসরে আড্ডা বা মোবাইলে সময় কাটানো ছাড়া বিকল্প কিছু নেই।”
আবদুল মালেক উকিল হলের শিক্ষার্থী ইয়াকুব শেখ বলেন, “খেলাঘর উদ্বোধনের পর আমরা ভেবেছিলাম মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক হবে। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই সব নষ্ট হয়ে যায়। এখন সেটি পুরোপুরি অচল অবস্থায় পড়ে আছে।”
কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ ইকবাল সজিব বলেন, “একসময় মালেক হলের স্পোর্টস রুম শিক্ষার্থীদের প্রাণের আড্ডাস্থল ছিল। কিন্তু সরঞ্জাম সংকট, অব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেটির অবস্থা এখন করুণ। টেবিল টেনিসের ব্যাট ও বল অকার্যকর, ক্যারমের গুটি ভাঙা, দাবার বোর্ড ছেঁড়া অবস্থায় পড়ে আছে। বারবার প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেও কোনো সমাধান হয়নি।”
এদিকে ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলের প্রোভোস্ট ফরিদ দেওয়ানের সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, “আমাদের হলে খেলাঘরের জন্য আলাদা কোনো কক্ষ নেই। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দ্রুত দাবা, ক্যারম ও টেবিল টেনিস সরঞ্জাম সংগ্রহ করব। খেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ও শারীরিক শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”
আবদুল মালেক উকিল হলের প্রোভোস্ট তসলিম মাহমুদ বলেন, “গত সপ্তাহে আমি স্পোর্টস রুম পরিদর্শন করেছি। টেবিল টেনিস বোর্ড নষ্ট থাকলেও মেরামতের কাজ শুরু হচ্ছে। ব্যাট ও বল নতুন করে আনা হবে। ক্যারমের গুটি সংকট সমাধান হবে। দাবার বোর্ড সংরক্ষণের জন্য লক ব্যবস্থা করা হয়েছে। খেলাঘরে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে যাতে সরঞ্জাম নষ্ট না হয়। আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকে আবার খেলাঘর চালু হবে।”
শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ বছর পূর্তিতে খেলাধুলা ও বিনোদনের অবকাঠামোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক। অন্তত প্রতিটি হলে একটি করে কার্যকর খেলাঘর এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একটি জিমনেসিয়াম দ্রুত স্থাপন করা প্রয়োজন। তাদের আশা, বর্তমান প্রশাসন শিক্ষার্থীদের এই দীর্ঘদিনের চাহিদাকে এবার বাস্তবে রূপ দেবে।