নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত আসন, নেই শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ, এমনকি পাওয়া যাচ্ছে না চাহিদা অনুযায়ী বই। প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য আসন সংখ্যা মাত্র ১২০। অর্থাৎ প্রতি আসনের জন্য গড়ে পড়তে হচ্ছে অন্তত ৬৬ থেকে ৮৩ জন শিক্ষার্থীকে। ফলে পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে লাইব্রেরি বিমুখ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।
লাইব্রেরি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে গ্রন্থাগারে ২৬ হাজার ৯৭৩টি বই, ২৪টি আন্তর্জাতিক জার্নাল ও ই-বুক অ্যাক্সেস, শিক্ষকদের জন্য এন্টি-প্ল্যাগারিজম সফটওয়্যার সুবিধা রয়েছে। তবে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য আসন সংখ্যা মাত্র ১২০টি। মাত্র ৬টি টেবিলে গাদাগাদি করে এই আসনগুলো বিন্যাস করা হয়েছে। আবার গ্রুপ ডিসকাশনের জন্য নেই কোনো জায়গা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ছয়টি টেবিল ঘিরে শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে বসে পড়াশোনার চেষ্টা করছেন। দুই চেয়ারের মাঝখানে ফাঁকা জায়গা না থাকায় চলাফেরা করা কঠিন হয়ে যায়। কেউ চেয়ার থেকে উঠলেই শব্দ ছড়িয়ে পড়ে পুরো রুমে। ফ্যানের অতিরিক্ত শব্দ, বাইরের গাড়ির হর্ন আর আড্ডায় ব্যস্ত কিছু শিক্ষার্থীর কথোপকথন মিলে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও।
চারতলা ভবন হলেও লাইব্রেরির কার্যক্রম সীমাবদ্ধ নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে। বাকি তলাগুলোতে চলছে বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা। ফলে পর্যাপ্ত জায়গার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে।
এদিকে বইয়ের মজুদও সীমিত। নিয়মিত কোর্সের বই থাকলেও বিশেষায়িত বইয়ের ঘাটতি রয়েছে। অনলাইন ক্যাটালগ ব্যবহারের জন্য রয়েছে মাত্র একটি কম্পিউটার, যা অধিকাংশ সময়ই অচল থাকে। নেই নিজস্ব ওয়েবসাইট বা আধুনিক রেন্টাল সিস্টেম। ফলে বই খোঁজা ও ধার নেওয়ার প্রক্রিয়াও সময়সাপেক্ষ। ওয়াশরুমগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি আরও বাড়ছে।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রবিউল আউয়াল বলেন, ‘অনেক সময় পড়তে এসে জায়গা না পেয়ে ফিরে যেতে হয়। নেই পর্যাপ্ত ইন্টারনেট। আবার যেসব বই দরকার, সেগুলো লাইব্রেরিতে পাওয়া যায় না। বাসায় নিয়ে পড়ার সুযোগও সীমিত।’
শিক্ষা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোমেনুল ইসলাম বলেন, ‘লাইব্রেরিতে নিরিবিলি পরিবেশ নেই। আশেপাশের হৈচৈ মনোযোগ নষ্ট করে। এতে পড়াশোনার মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, লাইব্রেরিতে শৃঙ্খলা নেই। অনেক শিক্ষার্থী পড়ার পরিবর্তে আড্ডায় মেতে থাকে। এতে অন্যরা মনোযোগ হারান।
কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক উম্মে হাবীবা বলেন, ‘লাইব্রেরির পরিবেশ উন্নয়নে আমরা কাজ করছি। টেবিল-চেয়ার, এসি, কার্পেটসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের চাহিদা দিয়েছি। প্রশাসনও আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করছে।’
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘লাইব্রেরিতে পড়াশোনার সুন্দর পরিবেশ তৈরির জন্য আমরা নানা উদ্যোগ নিচ্ছি। আশা করছি, খুব শিগগিরই শিক্ষার্থীরা পরিবর্তন দেখতে পাবেন।’
আসন সংখ্যা বৃদ্ধি, শান্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা, ইন্টারনেট সেবার মানোন্নয়ন, চাহিদা অনুযায়ী বই ও জার্নাল সরবরাহ, গ্রুপ ডিসকাশনের জন্য আলাদা জায়গা, আধুনিক রেন্টাল সিস্টেম এবং নিজস্ব ওয়েবসাইট চালুর দাবি তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
তাদের আশা, দ্রুত উদ্যোগ নিলে নোবিপ্রবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি কেবল পাঠাগার নয়, আধুনিক ও গবেষণাবান্ধব শিক্ষাকেন্দ্রে রূপ নেবে।