পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী আঙ্গারিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার ফরিদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা সুপারের পদত্যাগ এবং এডহক কমিটি পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সুপার ফরিদ উদ্দিন নিয়োগ বাণিজ্য, অর্থ আত্মসাৎ ও ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। নিয়মিত অফিসে উপস্থিত না থেকে বাইরে বসেই কার্যক্রম পরিচালনা করায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং শিক্ষার মান অবনতির দিকে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, এর আগেও সুপারের অনিয়মের প্রতিবাদে আন্দোলন হলেও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গত ২৪ জুন ২০২৫ তারিখে প্রতিষ্ঠানটির এডহক কমিটি অনুমোদন দেয়। তবে ওই কমিটিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান দোকানদার মো. আহসান উল্লাহ এবং শিক্ষক প্রতিনিধি হন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম বশির উদ্দিন আহমেদ। তিনি ২০২২ সালের মৌকরন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বর্তমান সুপার ফরিদ উদ্দিন সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা রিপন মোল্লার কাছ থেকে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে পদ লাভ করেন। পরবর্তীতে সভাপতি ও সুপার মিলে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন এবং ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সহ-সুপার, নাইটগার্ড, আয়া ও লাইব্রেরিয়ানসহ কয়েকজনকে নিয়োগ দেন। এসব নিয়োগে প্রায় ৫০ লাখ টাকা লেনদেন ছাড়াও জমি আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
অভিভাবক ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, বর্তমান এডহক কমিটি গোপনীয়ভাবে নতুন করে নিয়োগ বাণিজ্য ও অর্থ আত্মসাতের পরিকল্পনা করছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় অভিভাবক ও এলাকাবাসীর পক্ষে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা মানিক হাওলাদার।
ছাত্রী অভিভাবক খালেক হাওলাদার বলেন, “সুপার আওয়ামী লীগের লোক ধরে ধরে কমিটি করছে। নৌকা মনোনীত প্রার্থীকে শিক্ষক প্রতিনিধি বানানো হয়েছে। এ ধরনের একতরফা কমিটি আমরা চাই না।”
স্থানীয় বাসিন্দা মানিক হাওলাদার বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের পরে এমন একতরফা কমিটি আমাদের প্রত্যাশা ছিল না। আওয়ামী পুনর্বাসন করে গঠিত এই কমিটি অবিলম্বে ভেঙে দিতে হবে। না হলে এলাকাবাসী আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।”
এ বিষয়ে সুপার ফরিদ উদ্দিন বলেন, “আমার মতে আওয়ামী লীগের লোক এই মুহূর্তে রাখা যায় না। তবে শিক্ষকদের সকলের মতামতের ভিত্তিতে তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। সে অনুযায়ী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়। পরে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাকে শিক্ষক প্রতিনিধি করেছেন।”
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মজিবুর রহমান বলেন, “এভাবে বিতর্কিত ব্যক্তিদের কমিটিতে রাখা উচিত হয়নি। তবে এটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের এখতিয়ারভুক্ত। আমাদের তেমন কিছু করার নেই। একটি অভিযোগ পেয়েছি, বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।”