জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জী ইউনিয়নের আইপিএম সদস্য বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের অনিয়ম ও ভেলকিবাজিতে কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। সদস্যদের কষ্টার্জিত সঞ্চয়ের টাকা আজ কেবল খাতায় সীমাবদ্ধ, ফেরত না পেয়ে ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন দপ্তরের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এদিকে কৃষি অধিদপ্তরের দেওয়া কয়েক লক্ষ টাকার কৃষি যন্ত্রপাতি অবহেলায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদে।
জানাযায়, ২০০৪ সালে কৃষি অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের আওতায় ৩১ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয় আইপিএম ক্লাব। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর পাঁচবিবি সমবায় অফিস কর্তৃক ‘ধরঞ্জী আইপিএম সদস্য বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে নিবন্ধন পায় সমিতিটি। (রেজি. নং–৯৬, আইডি নং–৫০৩৮১০১০৭৭)। এর পর থেকে ঋণ কার্যক্রম শুরু হলেও ২০২১ সাল থেকে সমিতির কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়।
ভুক্তভোগী সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন সমিতির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন সদস্যদের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তবে বাবুল হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে মাঠকর্মী আব্দুল হাকিমকে দায়ী করেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সালমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,“আমরা অভাবী মানুষ, কষ্ট করে সঞ্চয় করেছি। আমার ৩৩ হাজার টাকা আটকে আছে। এতদিনেও ফেরত পাইনি।”
অন্য আরেক সদস্য বাবলু চন্দ্র বর্মন বলেন, “আমার ৪৭ হাজার টাকা আটকে আছে এখনো। আমি ভ্যান চালিয়ে টাকা জমিয়েছিলাম, কিন্তু কয়েক দফা বৈঠক হলেও কোনো সমাধান হয়নি। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই।”
আরেক ভুক্তভোগী নাজমা বেগম বলেন, “গত তিন বছর ধরে আমার ৩৯ হাজার ৫০০ টাকা আটকে আছে যা ফেরত পাচ্ছি না।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন। দায়িত্বকালীন সময়ে আমি সচ্ছ হিসাব দিয়েছি। মাঠকর্মী আব্দুল হাকিম টাকার নয়ছয় করেছে।”
অন্যদিকে মাঠকর্মী আব্দুল হাকিম বলেন,“সমিতির সর্বেসর্বা ছিলেন বাবুল হোসেন। সব কাজ নিজের হাতে করতেন তিনি। আমি নিয়ম অনুযায়ী টাকা জমা করতাম। তিনি আরও বলেন,আমাকে দায়ী করে বাঁচতে চাইছে অন্যরা।”
এদিকে পাঁচবিবি সমবায় অফিসার মো. মোশারফ হোসেন জানান, “আইপিএম মূলত কৃষি অধিদপ্তরের একটি প্রকল্প। ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে সমিতির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে অডিটে নিষ্ক্রিয় তালিকায় রাখা হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এছাড়া পাঁচবিবির অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মেহেদী হাসান বলেন, “২০১৭ সালে কৃষি উন্নয়নের জন্য হারভেস্টার, পাওয়ার টিলার, রিপারসহ বেশ কিছু কৃষি যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছিল। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল সমিতির সদস্যদের উপর।
তিনি আরও বলেন বর্তমানে কিছু যন্ত্র নষ্ট হলেও যেগুলো মেরামতযোগ্য সেগুলো মেরামত করা হবে।”
পাঁচবিবি থানার তদন্ত পরিদর্শক ইমায়েদুল জাহেদী জানান, “এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ আছে। তদন্ত চলছে। সত্যতা প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”