কাশ্মীরে হামলা ইস্যুতে নতুন করে দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের ছয়টি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার কিছু পর শুরু হওয়া এ হামলায় অন্তত আটজন পাকিস্তানি নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ৩৫ জন। এরপরই পাকিস্তান সেনাবাহিনী আকাশ ও স্থলপথে পাল্টা জবাব দেয়। ইসলামাবাদ দাবি করেছে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে এবং নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছাকাছি ভারতের একটি সামরিক ব্রিগেড সদরদপ্তর গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
পাকিস্তানের বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী প্রথমে এই হামলার খবর জানান। তিনি বলেন, ভারতের হামলায় মসজিদ ও আবাসিক ভবনসহ একাধিক বেসামরিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আজাদ কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদ, বাগ ও কোটলি শহরের পাশাপাশি পাঞ্জাব প্রদেশের শিয়ালকোট, ভাওয়ালপুর ও মুরিদকে শহরে এসব হামলা চালানো হয়। মুজাফফরাবাদের বিলাল মসজিদে সাতবার হামলা চালানো হয়েছে, এতে মসজিদটি ধ্বংস হয় এবং এক শিশুকন্যা আহত হয়।
কোটলির আব্বাস মসজিদে পাঁচটি বিস্ফোরণে দুইজন নিহত হন—একজন কিশোরী ও আরেকজন তরুণ। আহত হন এক নারী ও তার ছোট্ট কন্যাশিশু। ভাওয়ালপুরের আহমেদপুর ইস্ট এলাকায় সুবহান মসজিদে চারবার হামলায় পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে তিন বছর বয়সী এক শিশু। সেখানে আহত হয়েছেন আরও ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক।
মুরিদকে শহরের উমালকুরা মসজিদেও চারবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। এতে একজন নিহত এবং একজন আহত হয়েছেন। শহরটির দুই বাসিন্দা এখনো নিখোঁজ। শিয়ালকোটের একটি গ্রাম ও শাখারগড়েও হামলা হয়েছে, যদিও সেখানে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
পাকিস্তানের জবাব: পাঁচ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত
পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ভারতের এই ‘অকারণ ও কাপুরুষোচিত আগ্রাসন’-এর জবাবে তাদের বিমান বাহিনী তৎক্ষণাত পাল্টা পদক্ষেপ নেয়। রাত সাড়ে ৩টার দিকে পাকিস্তান জানায়, তারা দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আরও তিনটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার খবর আসে।
রয়টার্সের বরাতে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভূপাতিত হওয়া পাঁচটি যুদ্ধবিমানের মধ্যে রয়েছে তিনটি রাফাল, একটি রাশিয়ান এসইউ-৩০ এবং একটি মিগ-২৯। পাকিস্তানের নিরাপত্তা সূত্র জানায়, এসব হামলায় ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অবন্তিপুরা অঞ্চলে একটি সামরিক সদরদপ্তরও ধ্বংস হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও পাকিস্তানের অবস্থান
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারতের হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি একটি উসকানিমূলক ও বেআইনি হামলা। তিনি বলেন, “পাকিস্তানের মাটি রক্ষায় আমরা সব ধরনের জবাব দেওয়ার অধিকার রাখি এবং সেই অনুযায়ী জবাব দিচ্ছি।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের এই আচরণকে ‘লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশা প্রকাশ করেছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বলেন, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ বিশ্ব সহ্য করতে পারবে না।” তিনি উভয় পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানান।
ভারতের অবস্থান ও বিতর্কিত দাবিগুলো
ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২২ এপ্রিল কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এ হামলা চালানো হয়েছে। তারা দাবি করেছে, পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তায়েবা গোষ্ঠীর স্থাপনাগুলোই ছিল এই অভিযানের লক্ষ্য।
তবে পাকিস্তান বলছে, ভারতের লক্ষ্য ছিল বেসামরিক জনপদ ও উপাসনালয়—যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও যুদ্ধনীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
আতঙ্কিত জনজীবন
মুজাফফরাবাদের স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ ওয়াহিদ বিবিসিকে বলেন, “রাতে ঘুমের মধ্যে প্রথম বিস্ফোরণের শব্দ শুনেই বাড়ি কেঁপে ওঠে। রাস্তায় বেরিয়ে দেখি সবাই আতঙ্কিত। পরপর আরও বিস্ফোরণ হলে পুরো এলাকায় বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে।” তিনি বলেন, “একটি সাধারণ মসজিদকে কেন টার্গেট করা হলো, আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।”