পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারতের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত আটজন প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ৩৫ জন। দেশটির আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (ISPR) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতদের মধ্যে দুজন শিশু রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে পাকিস্তানের কোটলি, ভাওয়ালপুর, মুরিদকে, বাগ ও মুজাফ্ফরাবাদে এই হামলা চালানো হয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এ হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ উল্লেখ করে বলেছে, এর যথাযথ জবাব দেওয়া হবে এবং কিছু জবাব ইতোমধ্যেই দেওয়া হয়েছে।
ভাওয়ালপুরের আহমেদপুর ইস্ট এলাকার একটি মসজিদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একটি শিশু নিহত হয় এবং আরও অন্তত ১২ জন আহত হন। ওই এলাকায় একটি বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে শিশুটির বাবা-মা আটকে পড়েছিলেন। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। কোটলিতে নিহত হয়েছেন আরও দুইজন বেসামরিক নাগরিক এবং একটি মসজিদও আঘাতের শিকার হয়েছে। মুজাফ্ফরাবাদেও একটি সড়কে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে, তবে সেখানে তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
এই হামলার ঘটনায় পাকিস্তানের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। সেনা মুখপাত্র জানান, এটি শুধু একটি সামরিক হামলা নয়, বরং সরাসরি বেসামরিক জনগণের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আঘাত। তিনি বলেন, পাকিস্তান এর যথাযথ জবাব দেবে এবং এই ঘৃণ্য উসকানির মূল্য ভারতকে দিতে হবে।
ভারতের পক্ষ থেকে এই হামলাগুলোকে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে অভিহিত করা হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে। তবে ভারত সরকার দাবি করেছে, এই অভিযানে তারা কোনো সামরিক স্থাপনায় আঘাত করেনি।
স্থানীয়রা বলছেন, বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তাদের। মুজাফ্ফরাবাদের বাসিন্দা মোহাম্মদ ওয়াহিদ জানান, রাতে হঠাৎ বিকট শব্দে ঘর কেঁপে ওঠে। তিনি রাস্তায় বেরিয়ে দেখেন সবাই আতঙ্কে ছুটোছুটি করছে। তার ভাষায়, ‘বাচ্চারা কাঁদছিল, মানুষ দিশেহারা হয়ে পালাচ্ছিল। এটা যেন এক অজানা বিভীষিকা।’
ওয়াহিদ আরও বলেন, মুজাফ্ফরাবাদের বিলাল মসজিদ ছিল এক সম্ভাব্য নিশানা। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘এই মসজিদে আমরা প্রতিদিন নামাজ পড়তাম। এখানে কখনো সন্দেহজনক কিছু দেখা যায়নি। তবুও কেন এটা হামলার লক্ষ্য হলো, বুঝতে পারছি না।’
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক এক বন্দুকধারীর হামলায় ৩৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকেই ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এর জেরে শুরু হয়েছে এই ভয়াবহ হামলা, যা পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা স্থল ও আকাশপথে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে এবং এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে শান্তি চাইলেও এ ধরনের হামলা মেনে নেওয়া হবে না বলেও জানানো হয়েছে। সূত্র: ডন ও বিবিসি