রাজশাহীতে শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমসের এবারের আসরে অংশ নিয়ে ফেরার সময় এক কোচসহ ১১ জন খেলোয়াড়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রবিবার সন্ধ্যায় পুলিশ কনস্টেবল ও তার স্ত্রীকে মারধরের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে রাজশাহীর আদালতে পাঠানো হয়।
মামলার আসামিরা হলেন- রাজশাহী মহানগরীর পাচানি মাঠ এলাকার আলী আজম (১৯), হাজরাপুকুর ডাবতলা এলাকার আকাশ আলী মোহন (২০), একই এলাকার আব্দুল আল জাহিদ (১৬), জিন্নানগর এলাকায় আহসান কবীর (৪৫), নিউ কলোনি এলাকার ফারহানা খন্দকার (১৭), কয়েরদাড়া এলাকার রিমি খানম (১৭), জেলার মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট এলাকার খাদিজা খাতুন (১৮), রাজশাহী মহানগরীর বখতিয়ারবাদ মালদা কলোনি এলাকার পাপিয়া সারোয়ার পূর্ণিমা (১৯), ছোচবনগ্রাম উত্তরপাড়ার দিপালী (১৯), বড় বনগ্রাম রায়পাড়া এলাকার সাবরিনা আক্তার (১৯), একই এলাকার জেমি আক্তার (১৪), মহানগরীর শাহ মখদুম থানার মোড় এলাকার বৃষ্টি মণি (১৬) এবং হাজরাপুকুর ডাবতলা এলাকার রমজান (১৯)। এদের মধ্যে রমজান ছাড়া বাকি সকলেই আটক হয়েছেন।
এই খেলোয়াড়েরা জুডো, কুস্তি, কারাতেসহ বিভিন্ন খেলা খেলেন। তাদের বিরুদ্ধে একজন পুলিশ সদস্যকে পেটানো এবং তার স্ত্রীর স্বর্ণের চেইন চুরির মামলা দেয়া হয়েছে।
মামলার বাদির নাম গোলাম কিবরিয়া (৩০) রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী খেতুর গ্রামের বাসিন্দা। এবং তিনি পুলিশের কনস্টেবল ও জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কর্মরত আছেন।
রবিবার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা জয়াকে নিয়ে তিনি ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন কিবরিয়া। দুপুরে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে গোলাম কিবরিয়াকে মারধর করা হয়। এরপর রাজশাহী রেলওয়ে থানা পুলিশ সবাইকেই থানায় নিয়ে যায়। বিকালে গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা বাদী হয়ে ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১২ জনকে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া ১৭ বছর বয়সী এক মেয়ে খোলোয়াড়ের চাচা বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমার ভাতিজিসহ এইসব খেলোয়াড়রা ঢাকায় যুব গেমস খেলতে গিয়েছিল। খেলে পুরস্কারও পেয়েছে। খেলা শেষে তারা রবিবার ধুমকেতু ট্রেনে আসছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘খেলোয়ারদের সবার ২৬ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ছিল একটি লাগেজে। ট্রেনে সেটি খুঁজে পাচ্ছিল না। তখন তারা ট্রেনে লাগেজটি খুঁজছিল। ওই সময় সিভিলে থাকা পুলিশ সদস্য গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে এক মেয়ে খেলোয়াড়ের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই পুলিশ সদস্য মেয়েটিকে থাপ্পড় মেরে দেয়। এছাড়া আরেক ছেলে খেলোয়াড়কেও মারে। দুপুরে স্টেশনে নামার পর তাদের আবারও হাতাহাতি হয়। এরপরই পুলিশ দুইপক্ষকে মীমাংসার নামে থানায় নিয়ে যায়। পরে মামলা করা হয়।’
রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোপাল কুমার বলেন, মারামারিতে পুলিশ সদস্য গোলাম কিবরিয়ার নাক ফেটে গেছে। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মামলায় তার স্ত্রী দাবি করেছেন, স্বামীকে মারধরের সময় তার গলার চেইন চুরি করে নেয়া হয়েছে। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে কিবরিয়ার ভাই গোলাম সারওয়ার এবং সারওয়ারের বন্ধু সাব্বির ইসলামকে। গোলাম সারওয়ার দাবি করেন, ট্রেনের ভেতরে কোনো ঘটনা ঘটেনি। ট্রেন থেকে আগে নামাকে কেন্দ্র করে স্টেশনে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মেরে তার ভাইয়ের নাক ফাটানো হয়েছে।
ওসি গোপাল কুমার আরও বলেন, ‘এতগুলো খেলোয়াড়কে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানোর সাহস আমার নেই। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলা নিয়েছি। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোচ এবং খেলোয়াড়দের আদালতে পাঠিয়েছি।’
এদিকে, রাত ৮টার দিকে সাতজনকে রাজশাহীর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। আদালতের তাদের কারাগারে পাঠান। আর অপ্রাপ্তবয়স্ক পাঁচজন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এ তোলা হয়। আদালত তাদের সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত জামিন দেয়।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মাইনুল ইসলাম জানান, এই শিশুদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এ তোলা হয়েছিল। শিশুদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। এজাহারে যা আছে তা-ও জামিনযোগ্য। রাত হয়ে যাওয়াই পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয়নি। তাই আদালতের বিচারক মুহা. হাসানুজ্জামান তাদের সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত অন্তর্বতীকালীন জামিন দিয়েছেন। সোমবার আদালতে জামিন আবেদনের পূর্ণাঙ্গ শুনানি হবে। তারপর আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।
অন্যদিকে জেলা জজ আদালতের পরিদর্শক পরিমল চক্রবর্তী জানান, প্রাপ্তবয়স্ক ছয়জন খেলোয়াড় ও কোচকে রাতে রাজশাহীর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়েছিল। ভারপ্রাপ্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. লিটন হোসেন আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। পরে রাতেই তাদের রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।