সুনামগঞ্জে পুলিশ কর্মকর্তা স্বামীকে ভিডিও কলে রেখে গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এক গৃহবধূ। পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আমির হোসেনকে (৩৭) বিয়ে করেছিলেন সেই গৃহবধূ মাহফুজা সাজনা রিক্তা (২২)। দুইবছর সংসার করলেও পরে মাহফুজা রিক্তা জানতে পারেন স্বামীর আরেক স্ত্রী রয়েছে এবং সেই ঘরে সন্তানও আছে। এরপরই পারিবারিক কলহ শুরু হয়। এর জের ধরে স্বামীকে মুঠোফোনে ভিডিও কলে রেখে ঘরের বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন মাহফুজা বেগম।
বৃহস্পতিবার(৭ জুলাই) দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের বাঁধনপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মাহফুজার পরিবার বিয়ের বিষয়টি মেনে নিলেও আমিরের পরিবার মেনে নেয়নি।
পুলিশ কর্মকর্তা আমির হোসেনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। বর্তমানে তিনি সুনামগঞ্জের দিরাই থানায় কর্মরত আছেন। মাহফুজা বেগমের বাবার বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সুলেমানপুর গ্রামে।
মাহফুজার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মাহফুজা সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে পড়ার সময় সুনামগঞ্জ পৌর শহরে থাকতেন আমির হোসেন। ওই সময় তাঁদের মধ্যে পরিচয় ও একপর্যায়ে প্রেমের সর্ম্পক হয়। বছরখানেক আগে বিয়ে করেন তাঁরা। এর পর থেকে শহরের বাঁধনপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন এ দম্পতি। আমির হোসেনের পরিবার এ বিয়ে মেনে নেয়নি। এর মধ্যে তিন মাস আগে মাহফুজা জানতে পারেন, আমির হোসেনের আরেক স্ত্রী এবং সেই ঘরে সন্তান রয়েছে। ওই সন্তান নিয়ে তাঁর প্রথম স্ত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাবার বাড়িতে থাকেন। এটা নিয়ে দুজনের সঙ্গে মনোমালিন্য শুরু হয়।
রিক্তার চাচী শারমিন বেগম জানান, এক বছর আগে রিক্তাকে বিয়ে করেন আমির। ওই সময় আমির জামালগঞ্জ থানায় চাকরি কররতন আর রিক্তা সুনামগঞ্জে পড়াশুনা করতেন। কিভাবে যেন দুজনের পরিচয় থেকে প্রেম গড়ে ওঠে। পরে তারা দু’জন বিয়ে করে। বিষয়টি রিক্তার পরিবার মেনে নিয়েছিল।
মাহফুজার মা খালেদা বেগম বলেন, আমির হোসেনের মা ও প্রথম স্ত্রী প্রায়ই মাহফুজাকে মুঠোফোনে কল করে গালাগাল করতেন। গতকাল বুধবার রাতেও একইভাবে তাঁকে গালাগাল করা হয়। মাহফুজা বিষয়টি আমির হোসেনকে জানালেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। উল্টো মাহফুজাকে মাঝেমধ্যেই নানাভাবে নির্যাতন করতেন আমির। তাঁদের পরিবারে অশান্তি লেগেই ছিল।
অভিযোগ প্রসঙ্গে আমির হোসেন জানান, স্ত্রীর সঙ্গে তার কোনো ঝামেলা ছিল না। তাঁর স্ত্রী অনেক জেদি ছিলেন। মাঝেমধ্যে রাগ করে মুঠোফোন ভেঙে ফেলতেন। আজ দুপুরে তাঁকে ভিডিও কলে রেখে মাহফুজা গলায় ফাঁস দিতে গেলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে বাড়িওয়ালাকে কল করে বিষয়টি জানান। কিন্তু বাড়িওয়ালা গিয়ে অনেক চেষ্টা করেও দরজা খুলতে পারনেনি। পরে সুনামগঞ্জ সদর থানা–পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় মাহফুজার লাশ পান।
আমির হোসেন আরও বলেন, আমার আগের বিয়ের বিষয়টি নিয়ে আমি তাঁকে অনেকবার বুঝিয়েছি। এরপরও মাঝেমধ্যে রাগ করত সে। এর আগেও আত্মহত্যা করবে বলে হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু সত্যি সত্যি সে আত্মহত্যা করে বসবে ভাবতেই পারিনি।