ভেদরগঞ্জ পৌরসভার বয়স প্রায় তিন দশক। কিন্তু এত বছরেও এখানে গড়ে ওঠেনি কোনো পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। ফলে ঘর থেকে শুরু করে বাজার, এমনকি হাসপাতালের ঝুঁকিপূর্ণ আবর্জনাও ফেলা হচ্ছে শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া খালে। এতে একদিকে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, অন্যদিকে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পৌরবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকি। চরম ভোগান্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন পৌর এলাকার অন্তত ২০ হাজার মানুষ।
১৯৯৭ সালে গঠিত শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ পৌরসভা। প্রায় ২ দশমিক ২৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত পৌর এলাকায় বসবাস করেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। কিন্তু দীর্ঘ ২৮ বছরেও গড়ে ওঠেনি আবর্জনা ব্যবস্থাপনার কোনো নির্দিষ্ট কাঠামো। ফলে শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে, এমনকি গুরুত্বপূর্ণ বাজার, ক্লিনিক ও হাসপাতালের আশপাশেও স্তুপ করে রাখা হচ্ছে ময়লা। নিরুপায় হয়ে এসব বর্জ্য প্রতিদিন খালেই ফেলা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, বাজারঘাটে প্রতিদিন জমে থাকা শত শত কেজি বর্জ্য কোনোরকম প্রক্রিয়াকরণ ছাড়াই খালের পানিতে ফেলা হচ্ছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর। এসব প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকিপূর্ণ মেডিকেল বর্জ্যও একইভাবে ফেলা হচ্ছে খালের মধ্যে, যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
এছাড়া অনেকে আবার এসব বর্জ্য জড়ো করে শহরের ভেতরেই খোলা জায়গায় পুড়িয়ে ফেলছেন। এতে গোটা এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিষাক্ত ধোঁয়া ও তীব্র দুর্গন্ধ। পৌর এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এসব কারণে শহরের পরিবেশ দিনদিন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে।
পৌর এলাকার ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, বাজারের পাশেই যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা। এতে দুর্গন্ধে অনেক সময় ক্রেতারা দোকানে দাঁড়াতেই চান না। তাদের দাবি, পৌর কর্তৃপক্ষ বারবার জানালেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে ভেদরগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মাজহেরুল হক বলেন, “পৌরবাসীর দুর্ভোগ ও পরিবেশদূষণ সম্পর্কে আমরা অবগত। দ্রুতই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ডাম্পিং ইয়ার্ড স্থাপন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও, বিকল্প জায়গা খুঁজে দ্রুত ডাম্পিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
এদিকে পৌরবাসীর প্রত্যাশা—দীর্ঘদিনের এই অব্যবস্থাপনা যেন এবার সত্যিকার অর্থে কোনো সমাধান পায়, এবং ভেদরগঞ্জ পৌরসভা একটি পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর শহরে রূপ নেয়।