আগে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের তথ্য লুকিয়ে রাখা হতো, তবে এখন সেই তথ্য প্রকাশ করার চেষ্টা চলছে। বলা হচ্ছে, বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ কোটি টাকা বা তারও বেশি হতে পারে। তবে, যখন পুরো তথ্য সামনে আসবে, তখন প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ কোটি টাকার বেশি হতে পারে। এই তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যাংকগুলোতে অডিট করা হচ্ছে এবং তার পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে খেলাপি ঋণ কমানোর পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত পাঁচ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বোর্ড পুনর্গঠন করেছে এবং একটি ব্যাংকিং টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এর মাধ্যমে ডলার বাজারের স্থিতিশীলতা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যদিও কিছু ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে, তবে পুরোপুরি আর্থিক স্থিতিশীলতা এখনও আসেনি এবং তাই বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। তবে, আর্থিক খাতে যে ভীতি ছিল তা কমে গেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ আমরা জানতে পারব, কোন ব্যাংকের মাধ্যমে কত টাকা পাচার হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পাচারের টাকা ফেরত আনা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, এবং নির্ধারিত সংস্থাগুলো এই বিষয়ে কাজ করছে। তবে, নিরাপত্তার কারণে এসব তথ্য আমাদের সঙ্গে শেয়ার করা হয় না।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে একাধিকবার নীতি সুদ হার বৃদ্ধি করেছে এবং আশা করা হচ্ছে জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কমে যাবে। যদি তা না হয়, তাহলে সুদ হার আরও বাড়ানোর চিন্তা হতে পারে। তবে ব্যবসায়ীরা এই পদক্ষেপে সন্তুষ্ট নন, কারণ তাদের ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেশি হয়ে যায় এবং বিনিয়োগের গতিও ধীর হয়ে যায়। তাই, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থাগুলোকেও যথাযথভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগের নিম্নগতি শুধু সুদের হার বাড়ানোর কারণে নয়। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জ্বালানি সরবরাহ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার মতো অন্যান্য বিষয়ও বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত। এজন্য শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রচেষ্টা দিয়ে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
এছাড়া, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। গত নভেম্বরে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৭.৬৬ শতাংশ, যা গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ঋণ বিতরণে জালিয়াতি এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোর নতুন ঋণ বন্ধ হওয়ার কারণে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে। বর্তমানে এই ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের টাকা মেটাতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।
বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেক ব্যাংক এখন সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। এতে তাদের মুনাফা বাড়ছে, কারণ ঋণ প্রদানে ঝুঁকি থাকে, কিন্তু বন্ডে মুনাফা নিশ্চিত। ২০২৪ সালের শেষে, অনেক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৬৬ শতাংশ, যা ২০২১ সালের মে মাসের পর সর্বনিম্ন। ওই সময় প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৫৫ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক ৯.৮ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, কিন্তু নভেম্বরে তা অর্জিত হয়নি।