একটি জাতীয় দৈনিকে সম্প্রতি এক সংবাদ প্রকাশিত হয় যেখানে ভারতীয় এক ‘হকার’ সাংবাদিককে প্রতিবন্ধী বলে উল্লেখ করা হলো। অথচ আমাদের জানাই নেই ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দের মানে কী? কিংবা কেমন হওয়া উচিত প্রতিবন্ধী নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি।
প্রথমত যাদের প্রতিবন্ধী বলে গালি দিচ্ছেন তারা কি ইচ্ছেকৃত ভাবে নিজেকে প্রতিবন্ধী বানান? একজন প্রতিবন্ধীকে এমনভাবে বলা হলে তার কাছে কেমন অনুভব হতে পারে। অথচ প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমাদের ভালোবাসার দৃষ্টি থাকা উচিত। কোনো ‘হকার সাংবাদিক’কে প্রতিবন্ধী বলা হলে প্রতিবন্ধীদের অপমান করা হয়।
এই প্রতিবন্ধী বলে যাদের অভিহিত করা করা হয়, আসলে সেই মানুষদের ব্যাপারটা কেমন আসুন আগে তাদের সম্বন্ধে জেনে নিই–
প্রতিবন্ধিতা হল এমন কোনো অবস্থার অভিজ্ঞতা যা একজন ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট ক্রিয়াকলাপ করা বা একটি নির্দিষ্ট সমাজের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার পাওয়া আরও কঠিন করে তোলে। অক্ষমতা জ্ঞানীয়, বিকাশমূলক, বুদ্ধিবৃত্তিক, মানসিক, শারীরিক, সংবেদনশীল বা একাধিক কারণের সংমিশ্রণ হতে পারে। অক্ষমতা জন্ম থেকেই হতে পারে বা একজন ব্যক্তির জীবদ্দশায় অর্জিত হতে পারে।
ঐতিহাসিকভাবে, অক্ষমতা শুধুমাত্র একটি সংকীর্ণ মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে স্বীকৃত হয়েছে-তবে, প্রতিবন্ধীতা বাইনারি নয় এবং ব্যক্তির উপর নির্ভর করে অন্যান্য বৈশিষ্ট্যে উপস্থিত হতে পারে।
একটি অক্ষমতা সহজে দৃশ্যমান হতে পারে, বা প্রকৃতিতে অদৃশ্য হতে পারে।
WHO (World health organization) এর মত:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রকাশিত “International classification of impairment, Disability and Handicap (ICIDH)” শীর্ষক প্রকাশনায় বিকলাঙ্গ ও প্রতিবন্ধী সমস্যাকে ৩ শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে।
যথা-
১. দুর্বলতা (Impairment)
২. অক্ষমতা (Disability )
৩. প্রতিবন্ধী (Handicap)
বাংলাদেশে মোট ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতা নিয়ে কাজ করা হয়। এ পর্যায়ে কিছু উদাহরণ দিলাম। যেমন–
কখন শুরু হয়েছে তার ভিত্তিতে
প্রাথমিক প্রতিবন্ধিতা: বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধিত্ব নিয়ে জণ্মগ্রহণ করলে তাকে প্রাথমিক প্রতিবন্ধীতা বলা হয় ৷
পরবতী বা অর্জিত প্রতিবন্ধিতা: জন্মের পরে বিভিন্ন কারণে প্রতিবন্ধিত্ব বরণ করে থাকলে তাকে পরবতী বা অর্জিত প্রতিবন্ধিতা বলা হয় ৷
কোন অঙ্গ আক্রান্ত হয়েছে তার ভিত্তিতে:
অটিজম, সেরিব্রাল পালসি,ডাউনসিনড্রম
শারীরিক প্রতিবন্ধী:
চলনে অক্ষম ব্যক্তিকে দৈহিক/শারীরিক প্রতিবন্ধী বলে।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী: যারা দেখতে পান না।
শ্রবণ প্রতিবন্ধী:যারা শুনতে পারেন না
বাক প্রতিবন্ধী: যারা কথা বলতে পারেন না।
বুদ্ধি প্রতিবন্ধী: চিন্তার সক্ষমতা যাদের নেই।
বহুবিধ প্রতিবন্ধী প্রভৃতি।
যাই হোক উপরের বিশ্লেষণ এই জন্যই তুলে ধরা যে একজন সাংবাদিক একটি জাতীয় দৈনিকে তিনি নিজের অজ্ঞতার কারণেই হোক– ‘ময়ূখ রঞ্জণে’র মতো একজন ‘হকার সাংবাদিক’কে আমাদের এই পবিত্র মানুষগুলোর সাথে তুলনা করলেন। ময়ূখ রঞ্জনকে আপনি হকার বলতে পারেন। তবে প্রতিবন্ধী না। এতে প্রতিবন্ধী যেই মানুষগুলো তাদের অপমান করা করা হয়। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসাথে ওই পত্রিকার সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তারা যেন এই লেখার জন্য ক্ষমা চান। আপনাদের এত বড় ভুল কিভাবে হয়।
লেখক, ড.নাছিমা ইসলাম চৌধুরী বৃষ্টি