গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর টানা হামলায় ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির ঘটনায় শোক জানিয়েছে জাতীয় সংসদ। শোক প্রস্তাবে স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, ‘গাজাসহ ফিলিস্তিনের অন্যান্য জায়গায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর বর্বরোচিত হামলায় নিহত শিশু ও হতাহতদের স্মরণে জাতীয় সংসদ গভীর শোক প্রকাশ করছে। নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।’
রবিবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের ২৫তম অধিবেশনের শুরুতে এই শোক জানানো হয়।
চলতি সংসদের তিনজন সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামাল, উকিল আবদুস সাত্তার ও এম শাহজাহান মিয়ার মৃত্যু এবং নিহত ফিলিস্তিনিদের স্মরণে এই শোক প্রস্তাব আনা হয়। পরে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাবটি গ্রহণ করে জাতীয় সংসদ।
এছাড়া মরক্কো ও আফগানিস্তানে ভূমিকম্প, লিবিয়ায় বন্যা, সিকিমের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা ও শোক জানিয়েছে সংসদ।
সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী চলতি সংসদের তিন সদস্যের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণের পরপরই সোমবার বিকেল চারটা পর্যন্ত সংসদ মুলতবি ঘোষণা করা হয়। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
অধিবেশন শুরুর আগে অনুষ্ঠিত কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত সংসদ পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয় বলে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়েছে।
শোকপ্রস্তাবের ওপর অনুষ্ঠিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারি ও বিরোধী দলের এমপিরা বক্তব্য রাখেন। পরে সংসদে একমিনিট নীরবতা ও দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ক্ষমতাসীন দলের এমপি হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রস্তাবের আলোচনায় বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই সংসদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। এটাই বোধ হয় এই আমলের শেষ অধিবেশন। আর সেই অধিবেশনটা শুরু করতে হলো কয়েকজন সংসদ সদস্যের মৃত্যুর সংবাদ দিয়ে।’
সংসদনেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘একে একে আমরা অনেক সদস্যকে হারিয়েছি। কোভিডকালে তো ছিল আরও বেশি। এবার আমাদের তিনজন সদস্য আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁদের বয়স হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ভোট ও ভাতের অধিকারসহ গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তাদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে।’
শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আ স ম ফিরোজ, নূর উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন খান, মুহিবুর রহমান, কাজী কানিজ সুলতানা বক্তব্য দেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা ও পীর ফজলুর রহমানও আলোচনায় অংশ নেন।
চলতি সংসদের তিন সদস্য ছাড়াও সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদুর রহমান, এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী, এবাদুর রহমান চৌধুরী, একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি আসাদ চৌধুরী, একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতউল্লাহ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বোন ফেরদৌস আরা, গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেনের মাতা আক্তার নেসা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হারুন-উর-রশীদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে সংসদ।
শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনের মুসলমানেরা যেভাবে নিহত হচ্ছেন, বাংলাদেশের কোনো ধর্মীয় রাজনৈতিক দল তাদের (ইসরাইল) বিরুদ্ধে স্টেপ নিচ্ছে না, কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। কারণ কী? বিদেশিরা চায় এ দেশের মৌলভিরা বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে রাজনীতিতে আসুক। পরবর্তীতে আমাদের দেশ দখলে নিবে। আমরা যারা রাজনীতিতে সচেতন তাদের উচিত হবে আগামীতে দেশটাকে সুন্দরভাবে গঠন করার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ ও জাতির কল্যাণে এগিয়ে আসা।’
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মোড়ল বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঢুকতে চাচ্ছে। রাজনীতিবিদরা যাতে রাজনীতিতে থাকতে পারে সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে রাজনীতিবিদেরা যাতে রাজনীতির নীতি মেনে চলেন সেই আহ্বানও জানাই।