ফেনী ও পাশ্ববর্তী জেলাগুলোতে চব্বিশের ভয়াবহ বন্যার বছর পার না হতেই আবারো কৃত্রিম বন্যা ও শহরে জলাবদ্ধতায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কয়েকটি নাগরিক ও সামাজিক সংগঠন।
বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনগুলোর সদস্যরা এসব প্রতিক্রিয়া জানায়।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে আমাদের প্রিয় ফেনী জেলা শহর কার্যত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ ধরনের বৃষ্টি মৌসুমে স্বাভাবিক বিষয় হলেও, নগর ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার চরম বেহাল দশা শহরবাসীকে চরম দুর্ভোগের মধ্যে ফেলেছে। পথঘাট, বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডুবে যাওয়ার কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীদের চলাফেরা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, শতশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও অফিস কার্যত অচল অবস্থায় রয়েছে।
আমরা মনে করি, এই পরিস্থিতি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং বছরের পর বছর অপরিকল্পিত ড্রেনেজ, সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব এবং দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর অবহেলার
ফল।
নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, এক বছর আগে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় আশেপাশের অন্তত ১১ জেলার মানুষের হাজার কোটি টাকার সম্পদহানী হলেও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় অজানা কারণে অবহেলিত এই অঞ্চলের কল্যাণে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়নি। অজানা কারণে বিগত প্রায় দেড়যুগ ধরে বঞ্চনার শিকার ফেনীবাসীকে বন্যা থেকে স্থায়ী সুরক্ষা দিতে পানি সম্পদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে বারবার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে তাগাদা দেয়া হলেও তারা কর্নপাত করেনি। যার ফলে এবারো ভারত থেকে আসা পানিতে পরশুরাম ফুলগাজীর মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
নেতৃবৃন্দ মনে করেন, বিএসএফ কতৃক বল্লামুখা বাঁধ কেটে দেয়ার এক বছর পরও বাঁধটি পুননির্মাণ করতে পারেনি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। ফলে বর্ষার এই সময়ে ভারতীয় পানিতে ডুবেছে সীমান্তবর্তী বাংলাদেশিরা। পানি সম্পদ উপদেষ্টাও এর দায় এড়াতে পারেন না।
যৌথ বিবৃতিতে ফেনী জেলা প্রশাসন, পৌর কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সকল দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের প্রতি দাবি জানান–
১. অবিলম্বে বল্লামুখা বাঁধ পুননির্মাণ করে স্থায়ী বন্যা প্রতিরোধ নিশ্চিত করতে হবে।
২. মুছাপুর ক্লোজার পুনর্নির্মাণে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. বাঁধ ও পানি নিষ্কাশন কার্যক্রমের দুর্নীতি তদন্ত করে কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. দ্রুততম সময়ের মধ্যে শহরের পানি নিষ্কাশনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫. ড্রেনেজ সিস্টেম সংস্কার ও মেইনটেন্যান্সকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
৬. নগর উন্নয়নের নামে যত্রতত্র নির্মাণকাজ ও বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে।
৭. জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি প্রশাসনিক তদারকি জোরদার করতে হবে।
যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন, নাগরিক সংগঠন ফেনী কমিউনিটির মুখপাত্র বুরহান উদ্দিন ফয়সল, ইউনিভার্সিটি এক্স স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব ফেনী-উসাফের সভাপতি অধ্যাপক এবিএম নুরুল আবসার ও সেক্রেটারি ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন রাসেল, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এক্স স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব ফেনীর পক্ষে অধ্যাপক মোশাররফ হোসাইন, ফেনী সদর এসোসিয়েশন ঢাকার সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন রুমেল, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি এক্স স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব ফেনীর সাধারণ সম্পাদক
শরিফুর রহমান আদিল, ফেনী জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা
এহসানুল মাহবুব জোবায়ের ও সভাপতি শরিফুল ইসলাম শ্রাবণ।
ফেনীর সকল নাগরিকের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তারা বলেন, আপনারা নিজেরা নিয়ম মেনে চলুন এবং যথাসম্ভব পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব নিন। পাশাপাশি এই সংকটময় সময়ে প্রতিবেশীদের সহযোগিতা করুন।
প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়– জনমতকে গুরুত্ব দিয়ে যেন বন্যা মোকাবিলা কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা হয়।
ফেনীর মানুষের পাশে অতীতের মতো সবসময় সর্বশক্তি নিয়ে পাশে দাঁড়ানো প্রতিশ্রুতিও দেন নেতৃবৃন্দ।