ফেনীতে টানা বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যার পানি ধাপে ধাপে কমতে শুরু করেছে। ফলে জেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন দৃশ্যমান হচ্ছে বন্যার ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি।
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে। পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটসহ গ্রামীণ অবকাঠামো এমনটা জানিয়েছে জেলাপ্রশাসন।
জেলা মৎস্য বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাঁধ ভেঙে ও অতিবৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে জেলার ২ হাজার ৩৩০টি পুকুরের মাছ ও মাছের পোনা। এতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার মাছ ও ২ কোটি ৮১ লাখ টাকার পোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মারা গেছে ৪টি গরু, ৩টি ছাগল, ১টি ভেড়া, ১০ হাজার ৫০০ মুরগি ও ২৩৫টি হাস। ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব ৬৪ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। আরও প্রায় ২০ হাজার গবাদিপশু বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর কৃষিজমি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৮৪৫ হেক্টর আউশ আবাদ, ৫৩৭ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি, ১৪ হেক্টর মরিচ, ৭ হেক্টর আদা, আড়াই হেক্টর হলুদ ও ৬৮৯ হেক্টর বীজতলা।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, এটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন নয়। অনেক এলাকা এখনো পানিতে ডুবে আছে। পানি নেমে গেলে চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পাওয়া যাবে এবং পুনর্বাসনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গত সপ্তাহের সোমবার থেকে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে। ফুলগাজী ও পরশুরামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থান ভেঙে পড়ে। এতে জেলার দেড়শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়।
বর্তমানে ফুলগাজী ও পরশুরামে পানি কমতে শুরু করলেও ফেনী সদর ও ছাগলনাইয়ার বিভিন্ন ইউনিয়ন এখনো জলাবদ্ধতায় রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা অনেক মানুষ এখনো ঘরে ফিরতে পারেনি।
বন্যা উপদ্রুত এলাকায় এখনো বন্ধ রয়েছে সড়ক যোগাযোগ। কাদা ও গর্তে ভরা গ্রামীণ রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সহায়তাহীন হয়ে অনেক মানুষ এখনো দিন কাটাচ্ছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।