‘ফ্রেন্ডস’ তারকা ম্যাথিউ পেরির মৃত্যুর আগে তাঁকে কেটামিন সরবরাহের অভিযোগে অভিযুক্ত ক্যালিফোর্নিয়ার চিকিৎসক সালভাদোর প্লাসেন্সিয়া দোষ স্বীকারে রাজি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল প্রসিকিউটররা। গতকাল সোমবার দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্লাসেন্সিয়া কেটামিন সরবরাহের চারটি অভিযোগে দোষ স্বীকার করবেন। এসব অভিযোগের সর্বোচ্চ শাস্তি ৪০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে দোষ স্বীকার করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মামলায় আগেই দোষ স্বীকার করা চিকিৎসক মার্ক শ্যাভেজের মোবাইল থেকে উদ্ধার করা বার্তায় দেখা যায়, প্লাসেন্সিয়া পেরিকে ‘বোকা’ বলে উল্লেখ করেন। পরে তিনি লেখেন, ‘এই বোকাটা কত টাকা দেবে ভাবছি।’ আদালতে দাখিল করা নথি অনুযায়ী, প্লাসেন্সিয়া শুধু পেরির বাড়িতেই নয়, লং বিচ অ্যাকুয়ারিয়ামের পার্কিং লটেও তাঁকে কেটামিন ইনজেকশন দিতেন। এমনকি পেরির ব্যক্তিগত সহকারীকে কীভাবে ইনজেকশন দিতে হয়, তা শেখানোও হয়েছিল, যাতে বাড়িতে রাখা বাড়তি ওষুধ প্রয়োগ করা যায়।
২০২৩ সালের অক্টোবরে লস অ্যাঞ্জেলেসে নিজের বাড়ির সুইমিংপুলে ৫৪ বছর বয়সী তারকার মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল। ময়নাতদন্তে পেরির মৃত্যুর কারণ হিসেবে পাওয়া যায় ‘কেটামিনের তীব্র প্রভাব’। এটি একটি নিয়ন্ত্রিত ওষুধ, যা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কেনা যায় না। কিন্তু অনেকেই এই ওষুধ দিয়ে নেশা করেন। তবে ম্যাথিউ পেরি কী হিসেবে গ্রহণ করতেন, তা সে মুহূর্তে বোঝা যায়নি।
হতাশা ও আসক্তির সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ লড়াইয়ের কথা প্রকাশ্যে এলেও হঠাৎ তাঁর মৃত্যু বিশ্বজুড়ে ভক্তদের স্তব্ধ করে দেয়।১৯৬৯ সালের ১৯ অগস্ট ম্যাসাচুসেটে জন্মগ্রহণ করেন ম্যাথিউ পেরি। অল্প বয়সেই অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে লস অ্যাঞ্জেলেসে আসেন তিনি।
১৯৮৭ সালে ‘বয়েজ উইল বি বয়েজ’-এ প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান ম্যাথিউ পেরি। তবে তাঁর অভিনয় জীবনের মাইলফলক ছিল ‘ফ্রেন্ডস’। ১৯৯৪ সালে এই টেলিভিশন সিটকম সিরিজ শুরু হয়। এতটাই জনপ্রিয়তা পায় ওই সিরিজ যে টানা ১০ বছর তা চলে। ১০ সিজন পর, ২০০৪ সালে শেষ হয় ‘ফ্রেন্ডস’। সবার কাছে ম্যাথিউ পরিচিত হয়ে ওঠেন তাঁর বিখ্যাত চরিত্র ‘চ্যান্ডলার বিং’ হিসেবেই। বলা চলে, খাতা-কলমে লেখা সেই চরিত্রকে অভিনয়গুণে প্রাণদান করেছিলেন তিনি।
দেশ-বিদেশের দর্শক তাঁকে ম্যাথিউ নয়, চিনেছিলেন চ্যান্ডলার নামেই। তাঁর সংবেদনশীল কৌতুকাভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন অনুরাগীরা। সূক্ষ্ম রসবোধ, বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপে অবলীলায় নজর কেড়ে নিয়েছিলেন এই মার্কিন অভিনেতা। বিশেষ করে মনিকা ও জোয়ির সঙ্গে চ্যান্ডলারের সমীকরণ দর্শকদের খুব বিনোদন দিয়েছে। বন্ধুত্ব ও প্রেমের মিশেলে চ্যান্ডলারের চরিত্রকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন ম্যাথিউ।
পর্দায় কৌতুক চরিত্রে অভিনয় করে দর্শককে আনন্দ দিলেও ব্যক্তিগত জীবনে খুব একটা সুখী ছিলেন না ম্যাথিউ। জনপ্রিয় এই অভিনেতার জীবনে বিতর্কও নিছক কম ছিল না।
১৯৯৭ সাল থেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন তিনি। মাঝে কিছুদিন সুস্থ হয়ে উঠলেও ২০০১ সালে আবার নেশার দুনিয়ার চলে যান। ২০১৩ সালে একটি সাক্ষাৎকারে ম্যাথিউ নিজেই মাদকাসক্তের কথা স্বীকার করেন এবং কীভাবে পর্দার ‘ফ্রেন্ডস’রা বাস্তব জীবনেও তাঁকে নেশা থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করেছিলেন, তা বর্ণনা করেন।
পরে ম্যাথিউ পেরি ম্যালিবুতে তৈরি করেন ‘পেরি হাউস’, যা মাদকাসক্ত থেকে মুক্তি ও সুস্থ জীবনে ফিরতে সাহায্য করত যুব প্রজন্মকে। একাধিকবার নিরাময়কেন্দ্রে ভর্তি ছিলেন। জনসমক্ষে নিজের লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেছিলেন এই তারকা।