সম্প্রতি বগুড়ার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এক নারী বিচারকের কাছে অভিভাবক পা ধরে ক্ষমা চাওয়ার আলোচিত সেই ঘটনায় শিক্ষার্থী অভিভাবকদের আন্দোলনের মুখে বিচারককে বদলি করার পর এবার সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. রাবেয়া খাতুনকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
রবিবার (৯ এপ্রিল) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক দুর্গা রানী সিকদারের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। এতে প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুনকে জনস্বার্থে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকায় সংযুক্তের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ২১ মার্চ বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুনের উপস্থিতিতে তার কক্ষে এক বিচারকের বিরুদ্ধে ছাত্রীর মাকে অপদস্থ করার অভিযোগ ওঠে। ওইদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ঘটনার প্রতিবাদে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তিন দফায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
ঘটনার সূত্রপাত
বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়াকে কেন্দ্র করেই ঘটনার শুরু হয়। বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সহপাঠীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঘটনা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। ২১ মার্চ বেলা ১১টার দিকে প্রধান শিক্ষিকার ডাকে ৪ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে আসেন। সেই সময় ওই বিচারক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জেলে দেওয়ার হুমকি দেন।
এ সময় এক অভিভাবককে বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। অভিভাবকদের অপদস্ত ও শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বিদ্যালয়ে আসেন। তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করার আশ্বাস দেন। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিনকে প্রধান করে ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।
এ ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনের বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। ২৩ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের বদলি সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিতে ওই আদেশ দেওয়া হয়।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুনকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকায় সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি এই সপ্তাহের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।