শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫

বলপ্রয়োগে বিক্ষোভ দমনের যে পরিকল্পনা করেছিলেন হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
-বিজ্ঞাপণ-spot_img

জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া অভ্যুত্থানকালে শেখ হাসিনার কর্মসূচি নিয়ে জাতিসংঘের একটি তদন্ত দল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে। এই তথ্যগুলো বেশ কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার কাছ থেকে পাওয়া গেছে, যারা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা গত ১০ জুলাই রাতে ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালককে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে গোপন আলোচনা করার অনুমতি দিয়েছিলেন।

১৬ জুলাইয়ের পর, তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমঝোতা করতে বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও যুক্ত করেছিলেন, যারা ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা মনে করতেন যে, যদি তাদের ‘হেভি ইউনিট’ মোতায়েন করা হয়, তবে শুধুমাত্র জিহাদিরাই রাস্তায় থাকবে এবং অন্যান্য বিক্ষোভকারীরা ফিরে যাবে।

এই কর্মকর্তা আরও জানান, শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিক্ষোভ পরিস্থিতি তদারকি করতেন। জাতিসংঘ তাদের ফোনের কল লগ পর্যবেক্ষণ করে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

তারা জানান, শেখ হাসিনা প্রতিদিন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিক্ষোভ পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদন পেতেন, এবং তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা—ডিজিএফআই, এনএসআই ও পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)—সরাসরি তাকে রিপোর্ট দিত।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৪ আগস্ট শেখ হাসিনা জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের এক বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন। ওই বৈঠকে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন, এবং তারা ঢাকায় পদযাত্রা ঠেকাতে পুনরায় কারফিউ জারি এবং সেগুলো কার্যকর করার বিষয়ে আলোচনা করেন।

৪ আগস্ট রাতে, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে একটি আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সবাই একমত হন যে আন্দোলনকারীদের ঢাকায় প্রবেশ রোধ করতে সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশ যৌথভাবে মোতায়েন হবে এবং প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করা হবে।

জাতিসংঘের দল এক কর্মকর্তা থেকে জানা গেছে, ৫ আগস্ট সকালে বিজিবির মহাপরিচালকের কাছে দুটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পাঠানো হয়েছিল। প্রথম বার্তাটি আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে এসেছিল, যেখানে তারা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের ঢাকায় কোন রুট ব্যবহার করতে হবে সে সম্পর্কে তথ্য দিয়েছিল। দ্বিতীয় বার্তায় একটি ভিডিও ছিল, যেখানে মিছিলে আসা ব্যক্তিদের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিরক্ষা লাইন অতিক্রমের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

তবে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা একটি কর্মকর্তার কাছ থেকে ফোনে জানতে পেরেছিলেন যে, সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী হচ্ছে না।

শেয়ার করুন

সর্বশেষ নিউজ

ডিসির বাংলোর গর্তে মিলল দ্বাদশ নির্বাচনের সিলমারা ব্যালট

নাটোরের জেলা প্রশাসকের পুরোনো বাংলোর ভেতরে মিলল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিপুল পরিমাণ ব্যালট পেপার। যার বেশিরভাগই সিলমারা ব্যালট পেপার। শনিবার (২৯ মার্চ) দুপুর সাড়ে...

মিয়ানমারের ভূমিকম্প: ঢাকার জন্য কঠিন সতর্কবার্তা

মিয়ানমারের সাগাইং ফল্ট লাইনের ওপর গতকাল পরপর ছয়টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ঢাকার জন্য একটি কঠিন সতর্কবার্তা। কারণ বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত...

ঈদের আনন্দ বিশ্বজুড়ে, গাজায় রক্ত, ক্ষুধা ও আর্তনাদ

বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের ঘরে ঘরে ঈদের আনন্দ, কিন্তু ফিলিস্তিনের গাজায় ঈদের কোনো উৎসব নেই। সেখানে আছে শুধু কান্না, ক্ষুধা আর বোমার ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ। ইসরায়েলি বাহিনীর...

মৃত্যুপুরী মিয়ানমার, হাজার ছাড়াল নিহতের সংখ্যা

ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে মিয়ানমার। শুক্রবারের এই প্রলয়ঙ্করী কম্পনে নিহতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে, আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। শুধু মিয়ানমারই নয়, কম্পনের...

সম্পর্কিত নিউজ

ডিসির বাংলোর গর্তে মিলল দ্বাদশ নির্বাচনের সিলমারা ব্যালট

নাটোরের জেলা প্রশাসকের পুরোনো বাংলোর ভেতরে মিলল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিপুল পরিমাণ ব্যালট...

মিয়ানমারের ভূমিকম্প: ঢাকার জন্য কঠিন সতর্কবার্তা

মিয়ানমারের সাগাইং ফল্ট লাইনের ওপর গতকাল পরপর ছয়টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি...

ঈদের আনন্দ বিশ্বজুড়ে, গাজায় রক্ত, ক্ষুধা ও আর্তনাদ

বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের ঘরে ঘরে ঈদের আনন্দ, কিন্তু ফিলিস্তিনের গাজায় ঈদের কোনো উৎসব নেই। সেখানে...