বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় জাপানকে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নীতকরণে জাপান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, ‘নতুন মাত্রা যোগ করতে এবং আমাদের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও সুসংহত করতে জাপানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আমরা উন্মুখ হয়ে আছি।’
বৃহস্পতিবার রাতে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ার পথে জাপান বরাবরের মতোই বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে তারা (সরকার) আন্তরিকভাবে আশাবাদী।
বাংলাদেশ দু’টি বিশাল অর্থনৈতিক বাজার দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মুক্ত-বাজার, বাণিজ্যমুখী অর্থনীতির দেশ।
মোমেন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত, উচ্চ ক্রয় ক্ষমতা, সহজে প্রশিক্ষিত প্রাণবন্ত কর্মশক্তি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দ্রুত গতির প্রায় ১৭ কোটি ভোক্তার এই বাজার বাংলাদেশকে জাপানি ব্যবসার একটি বন্ধুত্বপূর্ণ গন্তব্যে পরিণত করতে পারে।’
ঢাকার একটি হোটেলে জাপানিজ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (জেসিআইএডি) ও জাপান বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (জেবিসিসিআই) আয়োজিত ‘জাপান-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন’ শীর্ষক নেটওয়ার্কিং প্রোগ্রামটি অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং জেসিআইএডি’র মহাসচিব ও জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউজি আন্দোও বক্তব্য দেন।
মোমেন বলেন, অগ্রণী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অর্জনের পথে বাংলাদেশের যাত্রায় জাপান সত্যিকারের বন্ধু ও বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে রয়ে গেছে।
জাপান এ পর্যন্ত দুই হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অনুদান, ঋণ ও কারিগরি সহযোগিতার আকারে বাংলাদেশকে উন্নয়ন সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাপানের কাছ থেকে এক হাজার ৮০০ মার্কিন ডলারের বেশি সহায়তা পেয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক উল্লেখযোগ্য অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প জাপানের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় সম্পন্ন হয়েছে বা বাস্তবায়নাধীন।
তিনি বলেন, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) প্রকল্প, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব (যমুনা) রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ী বন্দর প্রকল্প, মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প ইত্যাদির পূর্ণ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পরিকাঠামোগত ল্যান্ডস্কেপ রূপান্তর হবে।
এশিয়ার মধ্যে জাপান বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য।
গত এক দশকে জাপানে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে এবং গত অর্থবছরে এর পরিমাণ ১৩০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
জাপান বাংলাদেশের জন্য পঞ্চম বৃহত্তম আমদানি উৎস দেশ যেখানে পণ্য আমদানি দুই শত কোটি মার্কিন ডলারের বেশি এবং ১২তম বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) উৎস দেশ যেখানে এফডিআই স্টক প্রায় ৪৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
তিনি আরও বলেন, ‘যাইহোক, আমরা এখনও দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রকৃত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারিনি।’
মোমেন বলেন, ‘আমরা অবকাঠামো, আইসিটি, উচ্চ-প্রযুক্তি পণ্য, ইলেকট্রনিক্স, গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা ও খনন কাজ, অধিক ব্যয়কারী ভোক্তা ও জৈব-প্রযুক্তি পণ্য, নবায়নযোগ্য শক্তি, দক্ষ ও পেশাদার মানবসম্পদ সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে আমাদের দুই দেশের জনগণের পারস্পরিক
সুবিধার জন্য বৃহত্তর বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার আরও সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।’